ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইরানের ওপর সামরিক হামলা চালাবেন কিনা, সে বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এই তথ্য জানান। খবর আল-জাজিরার।
ক্যারোলিন লেভিট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তারা এখনও একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ অনেকটাই নির্ভর করবে এই আলোচনার ফলাফলের ওপর।
ট্রাম্পের দোদুল্যমান অবস্থান:
ট্রাম্পের এই ‘দুই সপ্তাহের সময়সীমা’ ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে। ট্রাম্পের ইরান নীতি নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহ ধরে ট্রাম্পের ইরান সম্পর্কিত মন্তব্যগুলো পরস্পরবিরোধী ছিল। তিনি একদিকে যুদ্ধের অবসান এবং শিগগিরই শান্তি প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আবার অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনা ও ইসরায়েলের বোমা হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের বিষয়টিও উড়িয়ে দেননি।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই দোদুল্যমান অবস্থানের পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। একটি ধারণা হলো, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘকাল ধরে ইরানের ওপর আমেরিকান হামলা চাইছেন, তিনি ট্রাম্পকে এই সংঘাতে জড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন।
ইরানি-আমেরিকান বিশ্লেষক নেগার মোর্তাজাভি আল জাজিরাকে বলেছেন, নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে কৌশলে পরাজিত করছেন, কারণ ট্রাম্প নিজেই শান্তির রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।
অন্য একটি ব্যাখ্যা হতে পারে যে, ট্রাম্প ইরানের ওপর চাপ বাড়িয়ে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ত্যাগ করতে বাধ্য করতে চাইছেন। সিবিএস নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনা 'ফোরডো'-তে বোমা হামলার ঝুঁকির বিষয়ে ব্রিফিং পেয়েছেন এবং এটি নিষ্ক্রিয় করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন। ফোরডো একটি ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা ধ্বংস করতে শক্তিশালী 'বাঙ্কার-বাস্টার' বোমা প্রয়োজন এবং এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আলোচনার সম্ভাবনা ও ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল:
যদিও হোয়াইট হাউস কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনার কথা বলছে, তবে অনেক বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের এই কৌশলকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের সভাপতি জামাল আবদি বলেছেন, ট্রাম্প নিজেকে একজন পাগল হিসেবে উপস্থাপন করে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ মেনে নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করতে পারেন, যা ইরান কয়েক দশক ধরে অস্বীকার করে আসছে।
শুক্রবার (২০ জুন) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে জেনেভায় আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন, যা এই সংকটের প্রথম মুখোমুখি আলোচনা। এই আলোচনার ফলাফল ট্রাম্পের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এই অঞ্চলে হাজার হাজার মার্কিন সেনা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হতে পারে। এছাড়াও, ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে, যা বিশ্বের ২০ শতাংশ তেলের সরবরাহ পথ।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, ইরানের ওপর সর্বাত্মক হামলা ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যা আঞ্চলিক ও এমনকি বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh