ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা রিয়ার এডমিরাল আলী শামখানি বেঁচে আছেন। বুধবার (২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।
গত ১৩ জুন দখলদার ইসরায়েল ইরানে অতর্কিত হামলা চালায়। ওইদিন তেহরানে আলী শামখানির অ্যাপার্টমেন্ট লক্ষ্য করে মিসাইল ছোড়ে দখলদাররা। এতে তার অ্যাপার্টমেন্টটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটির ছাদ ধসে পড়ে। তিনি সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকাও ছিলেন। তবে তাকে পরবর্তীতে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিউইয়র্ক টাইমস শামখানির পরিবারের সদস্য ও ইরানের কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছিল, তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। তার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া না যাওয়ায় এবং তাকে প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়ায় ওই সময় এ ধারণা আরও প্রবল হয় যে, শামখানি প্রাণ হারিয়েছেন।
কিন্তু গত শনিবার অন্যান্য কমান্ডারদের জানাজায় শামখানিকে দেখা গেছে বলে আজকের প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
তারা বলেছে, শনিবার শামখানি কালো স্যুট ও কালো শার্ট পরে আসেন। তবে ওই সময় তার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। এছাড়া হাঁটার জন্য তিনি একটি লাঠিও ব্যবহার করছিলেন। তাকে ওই সময় বেশ দুর্বল, মুখ শুকনো এবং তার ঘাড়ের অংশটি বেঁকে আছে দেখা যাচ্ছিল।
৬৯ বছর বয়সী শামখানি ইরানের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের যে পারমাণবিক আলোচনা চলছিল সেখানে তিনি তেহরানের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সেক্রেটারি ছিলেন এবং সম্প্রতি সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান।
শামখানি জাতিগতভাবে আরব। ইরানের খুজেস্তান প্রদেশে জন্ম নেওয়া খামেনির এ উপদেষ্টা আরবি ভাষায় বেশ পটু। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
ইরানি টিভিকে গত শনিবার এক সাক্ষাৎকারে শামখানি বলেন, “আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম। আমার স্ত্রী পাশের রুমে ঘুমাচ্ছিল। আমার যে ছেলে আমাদের সঙ্গে থাকে সে হামলার ১০ মিনিট আগে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। হামলার পর প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটি কোনো ভূমিকম্প। কিন্তু তখন আমরা একটি গাড়ি যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই। ওই সময় আমি বলি, ইসরায়েলিরা আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। ভবনটি ধসে পড়ায় অক্সিজেনের অভাবে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ধ্বংসস্তূপের নিচে তিন ঘণ্টা আটকে ছিলাম। ওই সময় জোরে জোরে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানকে ডাকছিলাম। তখন উদ্ধারকারীরা আমার কথা শুনতে পায়। তারা প্রথমে আমার পা খুঁজে বের করে। এরপর আমার পুরো দেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করে।”
তবে ওই হামলায় তার স্ত্রী আহত বা নিহত হয়েছেন কি না সেটি উল্লেখ করেননি আলী শামখানি।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস