পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশে সশস্ত্র ব্যক্তিদের হাতে অপহৃত বাসযাত্রীদের মধ্যে ৯ জনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই যাত্রীদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুটি বাস থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে পর্বতাঞ্চলে রাতের আঁধারে তাদের হত্যা করা হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি।
তবে অতীতে এমন বহু ঘটনার পেছনে বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তারা মূলত পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে আগতদের টার্গেট করে থাকে, কারণ বেলুচদের অভিযোগ—দেশটির কেন্দ্র সরকার তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করে পাঞ্জাবে ব্যয় করে।
সরকারি কর্মকর্তা নবীদ আলম জানিয়েছেন, নিহতদের অধিকাংশই শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন এবং পাঞ্জাবে ফিরছিলেন। প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ জানান, নিহতদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে এবং তাদের পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ওই অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের আগে বৃহস্পতিবারই নিরাপত্তা বাহিনী তিনটি বিদ্রোহী হামলা প্রতিহত করেছিল।
রিন্দ ভারতের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, এই বিদ্রোহীদের পেছনে ভারতের সমর্থন রয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসলামাবাদ বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছে, দিল্লি বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে, যা ভারত বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ভাষ্য, ‘ভারত এখন তাদের অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আরো তৎপর হয়ে উঠেছে।’ বেলুচিস্তানে আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সংগঠিত ও শক্তিশালী হলো বেলুচ লিবারেশন আর্মি। এই গোষ্ঠী সম্প্রতি হামলার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে, যার মূল লক্ষ্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং চীনের প্রকল্পগুলো। বিশেষ করে আরব সাগর উপকূলবর্তী কৌশলগত বন্দর গওয়াদারে চীনা নাগরিক ও চীনা বিনিয়োগ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযোগ, বেইজিং ইসলামাবাদের সঙ্গে মিলে বেলুচদের সম্পদ শোষণ করছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে একটি রেলপথ উড়িয়ে দেয় এবং ৪০০ যাত্রীকে জিম্মি করে, যার ফলে ৩১ জন নিহত হয়। বেলুচিস্তানে সহিংসতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, যার জেরে অঞ্চলজুড়ে উদ্বেগ ও নিরাপত্তা হুমকি আরো গভীর হয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স