× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নিউইয়র্কে বসছে বিশ্ব সম্মেলন, সুখবর পেতে পারে ফিলিস্তিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।

২৮ জুলাই ২০২৫, ১৫:৫৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২৮-২৯ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য দুই-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান বিষয়ক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে আবারও আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসানে এবং একটি টেকসই শান্তির পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। সৌদি আরব ও ফ্রান্সের যৌথ আয়োজনে এই সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন গাজায় মানবিক বিপর্যয় ক্রমেই চরমে উঠেছে। তাছাড়া ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় কূটনৈতিক ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক নজির সৃষ্টি হয়েছে। 

এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক নাম ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি ও দুই-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন’। এটি যেমন জরুরি, তেমনি ঐতিহাসিক বলেও অভিহিত করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন, যার মধ্যে ৫০ জন ছিলেন ফরাসি নাগরিক। এর পর থেকে গাজা যুদ্ধ এক ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। ৫৯ হাজারের বেশি  ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গাজার অবকাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।

সৌদি আরব শুরু থেকেই বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল প্রতীকী নয়, বরং “আঞ্চলিক শান্তির জন্য একটি কৌশলগত প্রয়োজন”। সম্মেলনের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাজ্যটি এমন সব প্রচেষ্টায় নিরলস সমর্থন দিয়ে আসছে, যেগুলো ন্যায়সঙ্গত শান্তি অর্জনে সহায়ক। দুই-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়নে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি, কারণ এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই দৃষ্টিকোণ থেকেই সৌদি আরব ও ফরাসি প্রজাতন্ত্র সম্মিলিতভাবে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সভাপতিত্ব করছে, যার লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান।“

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করা; যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের পথ সুগম করবে।

এই সম্মেলনের আগে রিয়াদ আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা জোরদার করেছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মানাল রাদওয়ান বলেন, ‘ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধানই নতুন আঞ্চলিক শৃঙ্খলার মূল ভিত্তি, যেখানে পারস্পরিক স্বীকৃতি ও সহাবস্থান থাকবে।’

জাতিসংঘে স্লোভেনিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি স্যামুয়েল জবোগার আরব নিউজকে বলেন, ‘এই সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য হলো দুই-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহায়তা সংগ্রহ করা। এর মাধ্যমে এমন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকবে।’

গাজা যুদ্ধ চলাকালীন স্লোভেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়েসহ ১০টি দেশ ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, ‘যুক্তরাজ্য দুই-রাষ্ট্র সমাধানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা এই সমাধান ব্যাহত হওয়া ঠেকাতে আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আগামী সপ্তাহের সম্মেলন আন্তর্জাতিক সংকল্প প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।’

সম্মেলনের আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ২৪ জুলাই ঘোষণা দেন, ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে এবং সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ ঘোষণা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘বিকল্প নেই। আমাদের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে। সব জিম্মি মুক্ত করতে হবে এবং গাজায় বিপুল মানবিক সহায়তা পাঠাতে হবে। কিন্তু সর্বোপরি, আমাদের একটি নিরস্ত্রীকৃত, কার্যকর, ও ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সক্ষম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে।’

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় এবং এটিকে ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দিকে একটি ধাপ হিসেবে আখ্যা দেয়। পিএলও’র সহসভাপতি হুসেইন আল শেখ বলেন, ‘ফ্রান্স আন্তর্জাতিক আইন ও ফিলিস্তিনি অধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল।’

অন্যদিকে, ইসরায়েল কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, এটি সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করছে এবং তিনি ফ্রান্সকে এমন একটি রাষ্ট্রকে বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ করেন, যা ইরানের প্রভাবাধীন পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেন। 

যুক্তরাষ্ট্রও ফ্রান্সের এই অবস্থানের সমালোচনা করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এটি হামাসকে উৎসাহিত করবে এবং শান্তি প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি যা প্রায় ৭৫ শতাংশ—ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ। ফ্রান্স হতে যাচ্ছে প্রথম জি-৭ দেশ যারা এই দলে যোগ দিচ্ছে।

একজন ফরাসি কূটনৈতিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, এই সম্মেলন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার সূচনা, এককালীন কোনো ঘটনা নয়। লক্ষ্য হলো দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে রাজনৈতিক গতি ফিরিয়ে আনা।

সম্মেলনটি চারটি মূল থিম ঘিরে গড়ে উঠবে, যার মাধ্যমে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা দূর করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বৈঠকে ফ্রান্স, সৌদি আরব ও অন্যান্য অংশীদার দেশসমূহ আরও বেশি দেশকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে আহ্বান জানাবে। এতে হামাসের মতো উগ্র সংগঠনকে দুর্বল করা যাবে।

নতুন কোনো চুক্তি ঘোষণা প্রত্যাশিত না হলেও, মুসলিম ও আরব দেশগুলোকে উৎসাহিত করা হবে যেন তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাস্তব অগ্রগতি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে প্রস্তুত থাকে।

ফিলিস্তিনি শাসনের সংস্কার 

প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস কনফারেন্স আয়োজকদের একটি চিঠিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা, জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ, ‘পে-ফর-স্লে’ কর্মসূচি বন্ধ করা, পাঠ্যপুস্তক সংস্কার এবং এক বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন। ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে পুরোপুরি নিরস্ত্রীকৃত।

হামাসকে বাদ দেওয়া ও নিরস্ত্রীকরণ

সম্মেলনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো হামাসকে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কাঠামো থেকে বাদ রাখা। ফ্রান্স, ইসরায়েলসহ বহু দেশ মনে করে, শান্তি নিশ্চিত করতে এর কোনো বিকল্প নেই।

সম্মেলনে বহু দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতিকরা অংশগ্রহণ করবেন এবং নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা ও যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন নিয়ে আটটি ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করবে।

সূত্র: আরব নিউজ

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.