ছবি: সংগৃহীত
বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির মাঝেই আবারও শীতল যুদ্ধ যুগের কৌশলে ফিরে যাচ্ছে বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের জবাবে শুক্রবার রাশিয়ার কাছাকাছি পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে, বৃহস্পতিবার মেদভেদেভ রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তথাকথিত ‘ডেড হ্যান্ড’ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্পের আরও সচেতন থাকা উচিত। ডেড হ্যান্ড কৌশল বলতে মূলত শীতল যুদ্ধ যুগের স্বয়ংক্রিয় কিংবা আধা-স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়; যা দেশের নেতৃত্ব ধ্বংস হয়ে গেলেও পাল্টা পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়ার ‘মৃত অর্থনীতি’ মন্তব্যের জবাবে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ওই মন্তব্য করেছিলেন। তার ওই মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে অবস্থান বদলে রাশিয়ার কাছাকাছি মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি ক্রেমলিন। তবে দেশটির জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা ভিক্টর ভোডোলাতস্কি সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বের মহাসাগরগুলোতে রাশিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিনের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের বিভিন্ন মহাসাগরে রাশিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিনের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশি। আর যেসব সাবমেরিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো অনেক আগেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’
• যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন (ওহাইও-ক্লাস)
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলোর (এসএসবিএন) গোপনে চলাচল ও নির্ভুল নিশানায় পারমাণবিক অস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা রয়েছে। এসব সাবমেরিন ‘বুমার’ নামে পরিচিত এবং বর্তমানে মার্কিন বাহিনীর বহরে অন্তত ১৪টি সক্রিয় বুমার রয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা টহলের জন্য তৈরি এসব সাবমেরিন বড় ধরনের মেরামত ছাড়াই ১৫ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। প্রতিটি সাবমেরিন সর্বোচ্চ ২০টি সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপ করার জন্য ব্যবহৃত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এসএলবিএম) বহন করতে পারে। এর প্রধান অস্ত্র ট্রাইডেন্ট ডি৫ এসএলবিএম ক্ষেপণাস্ত্র।
• যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্ট অ্যাটাক সাবমেরিন
যুক্তরাষ্ট্র তিন ধরনের পারমাণবিক চালিত ফাস্ট অ্যাটাক সাবমেরিন পরিচালনা করে : ভার্জিনিয়া-ক্লাস, সিউলফ-ক্লাস, এবং লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাস (বা ৬৮৮ ক্লাস)। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র এবং এমকে-৪৮ টর্পেডো দিয়ে সজ্জিত এসব সাবমেরিন শত্রু জাহাজ খুঁজে ধ্বংস করতে পারে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা তৎপরতা, নজরদারি এবং মাইন যুদ্ধেও সক্ষম এসব সাবমেরিন।
যুক্তরাষ্ট্রের ২৪টি ভার্জিনিয়া-ক্লাস এসএসএন রয়েছে। এর মধ্যে ইউএসএস হাওয়াই, ইউএসএস নর্থ ক্যারোলিনা, ইউএসএস মিসৌরি ইত্যাদি রয়েছে। ভার্জিনিয়া-ক্লাস এসএসএন মার্কিন নৌবাহিনীর সর্বাধুনিক যুদ্ধ প্ল্যাটফর্ম। এতে বিশেষ অভিযানের জন্য আলাদা সুবিধা ও ডুবুরিদের জন্য লক–ইন/লক-আউট চেম্বার রয়েছে।
মার্কিন বাহিনী বহরে সিউলফ-ক্লাসের তিনটি সাবমেরিন রয়েছে। যার মধ্যে ইউএসএস সিউল্ফ প্রথম বারের মতো ১৯৯৭ সালে কমিশন হয়। যদিও এই ক্লাসের উল্লম্বভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ব্যবস্থা নেই। তবে এতে আটটি টর্পেডো টিউব রয়েছে। টর্পেডো কক্ষে সর্বোচ্চ ৫০টি অস্ত্র রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
৬৮৮-ক্লাস (লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাসের) মার্কিন সাবমেরিন বাহিনীর মেরুদণ্ড হিসেবে মনে করা হয়। এর মধ্যে অন্তত ২৪টি সক্রিয় রয়েছে। ১৯৭৬ সালে সোভিয়েত হুমকি মোকাবিলায় নির্মিত এসব সাবমেরিন উচ্চ গতি ও গোপন গতিবিধির জন্য ব্যাপক কার্যকর। তবে ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে ভার্জিনিয়া-ক্লাসের মাধ্যমে এসব সাবমেরিন প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
• রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাবমেরিন বহর রয়েছে রাশিয়ার। প্রায় ৬৪টি সাবমেরিন আছে। এর মধ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন (এসএসবিএন) আছে প্রায় ১৪টি; যা রাশিয়ার কৌশলগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এর মধ্যে বোরেই-ক্লাস ও ডেল্টা আইভি-ক্লাস সাবমেরিনও আছে।
রাশিয়ার নৌবাহিনীতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বোরেই-ক্লাস ৮টি সাবমেরিন রয়েছে। এই সাবমেরিনের প্রতিটি ১৬টি বুলাভা এসএলবিএম ও ৬টি ৫৩৩ মিলিমিটার টর্পেডো লঞ্চার বহন করতে পারে। এটি অ্যান্টি-সাবমেরিন রকেট এবং মাইনও ছুড়তে পারে। এর ক্রু সদস্য সংখ্যা ১০০ জনের বেশি।
রাশিয়া বোরেই-ক্লাস সাবমেরিনকে ডেল্টা আইভি-ক্লাসের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করছে। দেশটির নৌবাহিনীর বহরে বর্তমানে অন্তত ছয়টি ডেল্টা আইভি সক্রিয় রয়েছে। এসব সাবমেরিনের প্রত্যেকটি অন্তত ১৬টি সিনেভা এসএলবিএম বহন করতে পারে এবং সমুদ্রের নিচে রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করছে।
• রাশিয়ার ফাস্ট অ্যাটাক সাবমেরিন
রাশিয়ার নৌবাহিনীতে চারটি ইয়াসেন-ক্লাস পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন রয়েছে। এসব সাবমেরিন আকারে ছোট এবং কমসংখ্যক ক্রু নিয়ে পরিচালিত হয়। এই সাবমেরিনে অন্তত ৫টি ৩এম৫৪-১ কালিবার ক্ষেপণাস্ত্র অথবা ৪টি পি-৮০০ ৩২-৪০ অনিক্স ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। যার ফলে স্থলভাগে ও সমুদ্রে যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে দূরপাল্লার হামলা চালানো যায়।
রুশ নৌবাহিনীর বহরে প্রায় পাঁচটি সক্রিয় আকুলা-ক্লাস সাবমেরিন রয়েছে। এই সাবমেরিনকে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে মনে করা হয়। রাশিয়ান ভাষায় ‘আকুলা’ অর্থ ‘হাঙর’। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাসের জবাবে তৈরি এসব সাবমেরিন কালিবার, অনিক্স বা গ্রানিট ক্ষেপণাস্ত্র এবং টর্পেডো নিয়ে পরিচালিত হয়।
সূত্র: এনডিটিভি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh