ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের সীমান্ত জোরপূর্বক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, ইউক্রেনের সীমানা জোর করে পরিবর্তন করা যাবে না। মাত্র দুই দিন পর ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার একটি সম্মেলন আলাস্কায় অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই দিন আগে এমন হুঁশিয়ারি এলো।
এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় নেতারা বলেন, ‘ইউক্রেনের জনগণের তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের স্বাধীনতা থাকা উচিত। ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার নীতি মেনে চলতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সীমানা জোর করে পরিবর্তন করা যাবে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ জন নেতার মধ্যে ২৬ জন স্বাক্ষর করেছেন বিবৃতিতে। অনুপস্থিত ছিলেন হাঙ্গেরির নেতা ভিক্টর অরবান, যিনি রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগ বারবার বাধাগ্রস্ত করেছেন।
এই বিবৃতির মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলোর উদ্বেগ প্রকাশ রাশিয়ার ইউক্রেন বিষয়ক কর্মকাণ্ড নিয়ে। বিশেষ করে সেই সব দেশ, যারা রাশিয়ার প্রতিবেশী অথবা যাদের ইতিহাসে সোভিয়েত দখলের স্মৃতি এখনো স্পষ্ট। তারা মনে করছে, ইউক্রেনের মতো পরিস্থিতি ভবিষ্যতে তাদের ওপরও বর্তাতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে। বাল্টিক দেশগুলো আবার বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ চালু করেছে। এবং পোল্যান্ড রাশিয়ার সীমান্ত বরাবর প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণে কোটি কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর ইতিহাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে সীমানা পরিবর্তনের উদাহরণে পরিপূর্ণ, তাই ইউক্রেনে তেমন কিছু ঘটার সম্ভাবনায় তারা খুবই উদ্বিগ্ন। রাশিয়া জোর করে দখল করা কোনো ভূখণ্ডের ওপর সার্বভৌমত্বের আইনি স্বীকৃতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
তবে, ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেগুলো হয়তো আর কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে ফিরবে না—এমন ধারণাও ধীরে ধীরে বাস্তবতা হিসেবে উঠে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, যেকোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে কিছু ভূখণ্ড বিনিময় হতে পারে, যেখানে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের পুরো ডনবাস অঞ্চল ও ক্রিমিয়া রাখবে। এর পরিবর্তে, তারা খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চল (যেগুলোর কিছু অংশ তারা দখল করে আছে) ছেড়ে দিতে পারে।
গত সপ্তাহে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে স্বীকার করেন, কিছু ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড হয়তো বাস্তবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই অবস্থার কোনো আইনি স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না।
ইউরোপীয় নেতারা তাদের বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন শুধু ইউরোপের নয়, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি’ এবং তারা একটি ‘ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি’র প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তারা আরও বলেন, ইউক্রেন যেন ‘কার্যকরভাবে আত্মরক্ষা করতে পারে’ তা নিশ্চিত করতে হবে এবং কিয়েভকে সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। ইউক্রেন বর্তমানে ‘আত্মরক্ষার প্রকৃত অধিকার’ প্রয়োগ করছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতির শেষে বলা হয়, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনের নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ অর্জনের পথে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’
তবে এই ঐক্যবদ্ধ ঘোষণার মাঝে একটি ছোট ছাপার লাইনে লেখা ছিল —‘হাঙ্গেরি এই বিবৃতির সঙ্গে একমত নয়।’
সামাজিক মাধ্যমে ভিক্টর অরবান জানান, তিনি এই বিবৃতিকে সমর্থন করেননি, কারণ এটি এমন এক বৈঠকের শর্ত নির্ধারণ করছে যেখানে ইইউকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সতর্ক করে বলেন, ‘বিচারকের আসন থেকে নির্দেশনা দেওয়া শুরু করবেন না।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলাস্কায় বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh