× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছেন পুতিন ও কিম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।

২৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন আগামী সপ্তাহে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিতব্য সামরিক কুচকাওয়াজে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছে চীন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নজিরবিহীন সফর হতে চলেছে।

এই ঘোষণা এমন এক সময় এলো, “যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিমের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন—যিনি সাধারণত বিদেশ সফরে খুব কমই যান। এই মুহূর্তে হোয়াইট হাউস ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জন্য একটি চুক্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।”

চীনের “বিজয় দিবস” “কুচকাওয়াজ আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হচ্ছে। এই অনুষ্ঠান চীনের নেতা শি জিনপিংয়ের জন্য কূটনৈতিকভাবে একটি বড় জয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যিনি বিশ্ব নেতৃত্বে চীনের নতুন অবস্থান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।”

পুতিন ও কিমসহ আরও ২৬টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এই কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এটি হবে ১৯৫৯ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো উত্তর কোরিয়ান নেতা চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছেন।

এই অনুষ্ঠানে চীন তাদের সর্বাধুনিক অস্ত্র প্রদর্শন করবে—যার মধ্যে থাকবে শত শত বিমান, ট্যাংক ও অ্যান্টি-ড্রোন ব্যবস্থা। এটি হবে চীনা সেনাবাহিনীর নতুন কাঠামো প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণভাবে প্রদর্শনের সুযোগ।

পুরো আয়োজনে প্রায় লক্ষাধিক সেনা ঐতিহাসিক তিয়ানআনমেন স্কয়ারে কুচকাওয়াজে অংশ নেবে। এতে চীনের সেনাবাহিনীর ৪৫টি বিভাগের সদস্য ও যুদ্ধপ্রবীণরা থাকবেন।

৭০ মিনিটের কুচকাওয়াজটি শি জিনপিং নিজে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং এটি পশ্চিমা বিশ্ব ও বিশ্লেষকদের নজরে থাকবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক প্রেস কনফারেন্সে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ‘ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব’কে প্রশংসা করে জানায়, উভয় দেশই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাবে।

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত শেষ বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে উত্তর কোরিয়া কিমের পরিবর্তে শীর্ষ কর্মকর্তা চো রিয়ং-হেকে পাঠিয়েছিল। এবারের অনুষ্ঠানে কিম নিজে উপস্থিত থাকবেন এবং শি ও পুতিনের সঙ্গে দাঁড়াবেন—যা নিছক ছবি তোলার বিষয় নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।

এই বৈঠক এমন সময়ে হচ্ছে, যখন ট্রাম্প মস্কোর সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের চেষ্টা করছেন। এই পটভূমিতে শি জিনপিংয়ের জন্য এটি একটি কৌশলগত সুবিধা, কারণ তিনি পুতিন ও কিম উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি কাছ থেকে জানতে পারছেন।

ট্রাম্পের সম্ভাব্য এশিয়া সফরের কয়েক সপ্তাহ আগেই এই বৈঠক হচ্ছে, যেখানে হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে ট্রাম্প শির সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী, বিশেষ করে শুল্ক চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে।

কিম জং উনের শেষ বেইজিং সফর ছিল ২০১৯ সালে, তখন দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি তিনবার বেইজিং সফর করেছিলেন, যা তার বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী বছর ছিল।

বেশিরভাগ পশ্চিমা নেতা এবারের কুচকাওয়াজে যোগ দিচ্ছেন না, কারণ তারা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরোধিতা করছেন এবং পুতিনের সরকারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

বেইজিং যদিও পুতিনের যুদ্ধের সমালোচনা করেনি, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বলছে চীন যুদ্ধকে সহায়তা করছে— যদিও চীন তা অস্বীকার করে। অন্যদিকে, কিম রাশিয়াকে অস্ত্র এবং সৈন্য সরবরাহ করেছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং এই কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন কিনা। এটি হলে ২০১৯ সালের পর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের প্রথম সাক্ষাৎ হতে পারে।

লি শুরুতে আমন্ত্রণ পেলেও তা গ্রহণ করেননি। পরিবর্তে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের জাতীয় সংসদের স্পিকারকে পাঠাবে বলে জানিয়েছে। প্রেসিডেন্টের অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য আসেনি।

লি, যিনি জুন মাসে নির্বাচিত হয়েছেন, কিমের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সোমবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি ট্রাম্পকে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারী হওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করতে চান।

তবে উত্তর কোরিয়া বারবার লিকে আক্রমণ করেছে এবং তার সব চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে। গতকাল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ লিকে “একজন উগ্র আগ্রাসনপন্থী” বলে উল্লেখ করেছে।

এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করলে লির কিমের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ মিললেও, যদি কিম তাকে প্রকাশ্যে অবজ্ঞা করেন, তবে তা একটি বড় অপমান হতে পারে।

আর রাশিয়া, বেলারুশ ও ইরানের রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশে লির উপস্থিতিও সিউলের জন্য বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারে।

এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী নেতাদের তালিকা চীনের উত্থান ও বিশ্বে তার পরিবর্তিত সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটায়।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির প্রমাণ। সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো শুধু নিম্নস্তরের প্রতিনিধি পাঠাবে।

মিয়ানমারের সেনা শাসক মিন অং হ্লাইং, যিনি আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে এবং চীনা বাণিজ্য ও সাহায্যের উপর নির্ভরশীল, তিনিও উপস্থিত থাকবেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কম প্রতিনিধি থাকছে — কেবলমাত্র স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো অংশ নেবেন, এবং বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরি প্রতিনিধি পাঠাবে।

তুলনামূলকভাবে, ২০১৫ সালের কুচকাওয়াজে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট মিলোস জেমান অংশ নিয়েছিলেন এবং পোল্যান্ড, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য সংসদীয় প্রতিনিধি বা সরকারি দূত পাঠিয়েছিল।

সূত্র: বিবিসি

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.