ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় রক্তাক্ত গাজা আবারও এক ভয়াবহ দিনে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) কেবল একদিনেই ইসরায়েলি বিমান ও স্থল অভিযানে অন্তত ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪ জন।
নির্বিচার বোমাবর্ষণে গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকা—জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ইউনিসেফ শহরটিকে আখ্যা দিয়েছে ‘ভয়ের নগরী’ হিসেবে।
শিশুসহ নিহত হচ্ছে পুরো পরিবার। তাল আল-হাওয়া এলাকায় এক তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় এক পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। ধ্বংসস্তূপের পাশে রক্তমাখা একটি শিশুর স্যান্ডেল যেন যুদ্ধের নির্মমতা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আহতদের নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে, কিন্তু সেখানেও ঠাঁই নেই। আল-শিফা হাসপাতালের মর্গে সারি সারি লাশ, বাইরে বিলাপরত স্বজন। এক মা তার সন্তানের নিথর দেহ জড়িয়ে বলছিলেন, "আমাকে ফেলে কোথায় গেলে, বাবা?"
গাজা সিটিতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যেখানেই পালাচ্ছেন, পিছু নিচ্ছে বিমান ও ট্যাংকের গোলাবর্ষণ। শেখ রাদওয়ান এলাকায় আশ্রয় নেওয়া মানুষের তাঁবু পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা গাজা সিটির ৪০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং অভিযান আরও জোরদার হবে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, শুধু জেইতুন এলাকায় মোতায়েন রয়েছে অন্তত ৫২টি ইসরায়েলি সামরিক যান।
উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের ভিড়ে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফাহতেও বেড়েছে সংকট। খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া এক গর্ভবতী নারী বলেন, “এখানে কোনো গোপনীয়তা নেই, শান্তিও নেই।”
এদিকে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় নিহত হন সাতজন, যাদের তিনজন শিশু। রাফাহতে ত্রাণ সংগ্রহে আসা মানুষের ওপর গুলিতে প্রাণ হারান আরও সাতজন।
এই একদিনেই নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭৫-এ। জাতিসংঘের হিসেবে, গাজা এখন ‘ভয়, পালানো ও জানাজার নগরী’।
সূত্র: আল জাজিরা