ছবি: সংগৃহীত।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। তিন দেশের পক্ষ থেকে পৃথক বিবৃতির মাধ্যমে এ স্বীকৃতির কথা জানানো হয়েছে। এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত, বিশেষ করে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধকে ঘিরে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে একটি ঐতিহাসিক মোড়।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে স্বীকৃতির কার্যকারিতা ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ফলে তিনটি প্রভাবশালী দেশ একযোগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল। এর মধ্য দিয়ে শিল্পোন্নত (জি সেভেন) সাত দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও কানাডা প্রথম ফিলিস্তিনকে এই স্বীকৃতি দিল।
আজ প্রথম কানাডা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক বিবৃতিতে বলেন, আজ থেকে কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয় রাষ্ট্রের একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। এক ভিডিওবার্তায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন, শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আশা পুনরুজ্জীবিত করতে, আজ আমি স্পষ্টভাবে বলছি—এই মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে—যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। তবে এই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এই দুই দেশের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহতা বাড়তে থাকার মুখে আমরা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ও শান্তির সম্ভাবনাকে জাগিয়ে রাখতে কাজ করছি।
এই স্বীকৃতি এমন সময় এলো, যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এবং ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বের সমাধানে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তি সম্মেলন নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আলবানিজে বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের ও বৈধ রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে অস্ট্রেলিয়া সম্মান জানাচ্ছে। স্বীকৃতির অংশ হিসেবে, ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনে অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস স্থাপন ও কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হবে, তবে তার আগে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবি অনুযায়ী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই সংস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে: ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকৃতি দেওয়া, গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন, আর্থিক, প্রশাসনিক ও শিক্ষাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
হামাসের প্রতি যে শর্ত
আলবানিজে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী পেনি ওয়ং বলেছেন, ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রে হামাসের কোনও ভূমিকা থাকতে পারবে না। তারা আরও বলেন, গাজা পুনর্গঠন ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে হোয়াইট হাউস ও আরব লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি
এদিকে তিন দেশের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইতোমধ্যে কানাডার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন এবং অস্ট্রেলিয়াকেও একইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
টেড ক্রুজ (টেক্সাস) ও এলিস স্টেফানিক (নিউইয়র্ক)-সহ ২৫ জন রিপাবলিকান ট্রাম্পঘনিষ্ঠ নেতা আলবানিজে, স্টারমার, কার্নি এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে চিঠি দিয়ে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েল সরকারের সর্বশেষ গাজা সিটি আক্রমণ এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন জানায়, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’।
তাদের প্রতিবেদনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার উস্কানির অভিযোগ আনা হয়েছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং কমিশন বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh