× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শেষবিদায় জানাতে ছেলের জন্য কবর খুঁড়ে অপেক্ষায় মা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত।

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের বালাতা শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা জামিলা সানাকরা তার ছোট ছেলে মাহমুদকে শেষবিদায় জানানোর জন্য কবর খুঁড়ে দিন গুনছেন। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, জামিলার তিন ছেলের কেউই আর বেঁচে নেই। তার বড় দুই ছেলেকে ইসরায়েল হত্যা করেছে, কিন্তু ছোট ছেলে মাহমুদের সঙ্গে কী ঘটেছে, তা তিনি এখনো জানেন না। 

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মাহমুদকে তার শোবার ঘরে গুলি করে ইসরায়েলি সেনারা তাকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাকে পরিবারের কাছে আর ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। ৬৭ বছর বয়সী জামিলা বলেন, 'ফিলিস্তিনি মায়েরা তাদের সন্তানকে দুবার বহন করেন; একবার গর্ভে, আরেকবার শোকযাত্রায়।'

'প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর দ্য রিকভারি অব মার্টায়ার্স বডিস' নামের একটি সংস্থার তথ্যমতে, পশ্চিম তীর ও গাজায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ২২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর তাদের মরদেহ নিয়ে গেছে ইসরায়েল। এসব মরদেহ প্রায়ই রেফ্রিজারেটরে রাখা হয় বা সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

জেরুজালেম লিগ্যাল এইড অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সেন্টার (জেএলএসি) বলেছে, ইসরায়েল এই কাজকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যার অর্থ হলো তারা ফিলিস্তিনিদের হারানো স্বজনের জন্য শোক পালনের সুযোগও দিতে চায় না। অনেক ফিলিস্তিনি মায়ের মতো জামিলাও তার ছোট ছেলেকে শেষবিদায় জানানোর সুযোগ পাননি।

গত ফেব্রুয়ারিতে জামিলার ঘরে ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, যা মেরামত করার সাধ্য তার নেই। জামিলা জানান, সেদিন ভোরে দুজন সেনা দরজা ভেঙে তাদের ঘরে ঢুকে পুরো পরিবারকে একটি কক্ষে বন্দী করে ফেলেন। এ সময় মাহমুদ তার নিজের শোবার ঘরে ছিলেন। 

জামিলা বলেন, 'তারা আমাকে মারতে মারতে মেঝেতে ফেলে দেয়। এরপর আমার বুক ও পায়ে পাড়া দেয়। এক সেনা আমাকে বলে, আমার কারণেই নাকি আমার সন্তানেরা সন্ত্রাসী হয়েছে এবং আমার কারণেই তারা মারা গেছে।' অন্য এক সেনা জিজ্ঞেস করেন, 'আপনার পরিবারে কতজন শহীদ আছে?' জামিলা বলেন, 'দুজন।' তখন তিনি বলেন, 'এখন থেকে তিনজন।' এই কথা শুনে জামিলা চিৎকার দিয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, 'মা হিসেবে নিজেকে অসহায় মনে হতে লাগল। আমি আমার সন্তানের জন্য কিছুই করতে পারিনি।'

সেনারা দাবি করে, পরিবারটি ঘরের ভেতরে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে এবং সেগুলো বের করতে চাপ দিতে থাকে। ঠিক এই সময় উপর তলা থেকে একটি গুলির শব্দ ভেসে আসে। সঙ্গে সঙ্গে মাহমুদের নাম ধরে চিৎকার দিয়ে ওঠে পরিবারের সদস্যরা। জামিলার বিশ্বাস, গুলির শব্দের পরপরই মাহমুদের তীব্র আর্তনাদই ছিল তার মুখ থেকে বের হওয়া শেষ শব্দ। তিনি বলেন, সেই শব্দ আজও তাদের ঘরে বাজে এবং পুরো পরিবারকে তাড়িয়ে বেড়ায়। পরিবারটিকে ছেড়ে দেওয়ার পর সেনারা মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে চলে যায়। 

জামিলা মাহমুদের রক্তে ভেজা জামাকাপড় দেখালেন, যেখানে গুলির কারণে ছিদ্র হয়ে যাওয়া টি-শার্ট ও প্যান্ট রয়েছে। এগুলো প্রমাণ করে যে, তার পুরো শরীর গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। তার বিছানা, কাপড় এবং কার্পেটে এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে, যা হামলার পর থেকে স্পর্শ করা হয়নি। দেয়াল ও জানালার ফ্রেমেও গুলির ছিদ্র রয়ে গেছে।

বালাতা শরণার্থীশিবিরের কবরস্থানে মাহমুদের বড় দুই ভাই আহমদ ও ইব্রাহিমের কবর রয়েছে। এর পাশেই মাহমুদের জন্য একটি কবর প্রস্তুত করে রেখেছে তার পরিবার। তারা এখন মাহমুদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া বা তার মরদেহ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। তবে তারা জানেন, এ দুটির কোনোটিই হয়তো সম্ভব নয়। 

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.