ছবি: সংগৃহীত।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেছেন, পরমাণু ইস্যুতে ইউরোপের তিন দেশের (যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি) সাম্প্রতিক আচরণ ভবিষ্যৎ আলোচনার গতিপথ পরিবর্তন করেছে এবং এই পর্যায়ে তেহরানের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো পরিকল্পনা নেই।
সোমবার (০৬ অক্টোবর) সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে বাঘাই বলেন, ইউরোপীয় তিন দেশের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ছিল দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বাধাসৃষ্টিকারী। তিনি অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় ত্রয়ী যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা ব্যবহার করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
বাঘাই বলেন, ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ বজায় রেখেছে এবং সংস্থার সঙ্গে নতুন সহযোগিতা কাঠামোতে পৌঁছেছে, যা সংস্থাটিকে সন্তুষ্ট করেছে। তবে প্রাথমিকভাবে সমর্থন জানালেও পরে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের অবস্থান থেকে সরে যায়।
তিনি আরও বলেন, “তাদের অযৌক্তিক শর্তের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো আলোচনার অংশীদার হিসেবে নিজেদের ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ভবিষ্যতের আলোচনা তাই অতীতের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন হবে।”
বাঘাইর মতে, ইউরোপীয় তিন দেশের পদক্ষেপ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাস্তবায়নে একগুঁয়েমি প্রদর্শনের ফল, যা কোনো আইনি বা কূটনৈতিক যুক্তির ভিত্তিতে নয়। এতে নিজেদেরই স্বার্থ, অগ্রাধিকার ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি জানান, ইরানের এই অবস্থানকে চীন ও রাশিয়াও সমর্থন করছে। রাশিয়া, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে, দ্রুতই এই পদক্ষেপের অবৈধতা চিহ্নিত করেছে।
বাঘাই বলেন, “ইরানও আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের সচিবালয়ের আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সমালোচনা জানিয়েছে।”
তিনি বলেন, “ইউরোপীয় তিন দেশের এই পদক্ষেপ জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর ওপর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না। জাতিসংঘ সনদের নীতিমালা রক্ষায় দেশগুলোকে এই বেআইনি ও চাপিয়ে দেওয়া পদক্ষেপ অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।”
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে ইরানি প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক নিউইয়র্ক সফরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছি, যেখানে ইউরোপীয় তিন দেশের নিরাপত্তা পরিষদ ও জেসিপিওএ বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার অপব্যবহারের বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ইরানের পরমাণু ইস্যুতে যেসব প্রস্তাব পাস হয়েছিল, সেগুলো হয় সর্বসম্মতভাবে বা অন্তত স্থায়ী সদস্যদের বিরোধিতা ছাড়া গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু এবার অন্তত দুই স্থায়ী সদস্য বিরোধিতা করেছে, যা স্পষ্ট করে—কোনো সর্বসম্মতি নেই এবং নিরাপত্তা পরিষদের কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।”
তিনি বলেন, “প্রস্তাব ২২৩১ অনুযায়ী, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কিত সব সীমাবদ্ধতা ১৮ অক্টোবরের মধ্যে উঠে যাওয়ার কথা ছিল এবং এই ইস্যুটি নিরাপত্তা পরিষদের কার্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার কথা।”
বাঘাই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার কথাও উল্লেখ করেন, বলেন, “জুন মাসে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যে অবৈধ হামলা চালানো হয়েছে, তার দায় জায়নিস্ট সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রকেই নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আইএইএ বোর্ডে তিন ইউরোপীয় দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যে প্রস্তাব তুলেছে, তা এই অবৈধ হামলার অজুহাত তৈরি করেছে। অথচ কোনো আইএইএ রিপোর্টেই ইরানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে বিচ্যুতির প্রমাণ মেলেনি।”
বাঘাই যোগ করেন, “আইএইএ ও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো দেশের শান্তিপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় হামলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আশা করি সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সংস্থার জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে, যাতে তাদের প্রযুক্তিগত ক্ষমতার রাজনৈতিক অপব্যবহার আর না হয়।”
তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, “ইরান সবসময় আইএইএকে আহ্বান জানিয়েছে তাদের কেবল প্রযুক্তিগত দায়িত্বে মনোনিবেশ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাবমুক্ত থাকতে।”
শেষে বাঘাই বলেন, “বর্তমান পর্যায়ে ইরানের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা ইউরোপীয় ত্রয়ী ও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রভাব ও পরিণতি পর্যালোচনা করছি। কূটনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া—যখন তেহরান মনে করবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কার্যকর হতে পারে, তখনই জাতীয় স্বার্থ ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে যে অপরাধমূলক কাজের স্বীকারোক্তি দিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক দায়ই আরও বাড়ায়। অবৈধ কর্মকাণ্ড স্বীকার করা কোনো বৈধতা দেয় না; বরং প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্র একটি আইনভঙ্গকারী রাষ্ট্র, যা বৈশ্বিক নীতিমালা ও নিয়ম মানে না।”
সূত্র: মেহের নিউজ
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh