গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা ও অবরোধের দুঃসহ দিনগুলোর কিছুটা অবসান ঘটলেও যুদ্ধবিরতির মধ্যে মানুষের জীবন এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ঘরবাড়ি, স্কুল আর হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের সঙ্গে এখন গাজার মানুষের নতুন দুঃস্বপ্ন নগদ অর্থের তীব্র সংকট।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির ছয় দিন পর, গত ১৬ অক্টোবর গাজার ব্যাংকগুলো খুলতে শুরু করে। কিন্তু ব্যাংকের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি গড়ালেও, অধিকাংশই হতাশ হয়ে ফিরছেন খালি হাতে।
৬১ বছর বয়সী ছয় সন্তানের জনক ওয়েল আবু ফারেস দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের সামনে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বললেন, ‘ব্যাংকে কোনো টাকা নেই, কোনো নগদ মজুদ নেই। কেবল কাগজপত্রে সই করে ফিরে আসতে হয়।’
গাজায় দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য নগদ অর্থের ওপর নির্ভর করতে হয়।
বাজারে খাবার কেনা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ পর্যন্ত সবই হয় নগদে। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ব্যাংকনোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল।
গাজার অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জয়্যাব বলেন, ‘ব্যাংক খোলা, এসি চলছে, কিন্তু ভেতরে নগদ লেনদেন হয় না। কেউ টাকা জমা দিতে পারে না, তুলতেও পারে না।
মানুষ এখন কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যায়, যারা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ফি কেটে বেতন নগদে রূপান্তর করে দেয়।’
সাত সন্তানের মা ইমান আল-জাবারি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘একসময় ব্যাংকে লেনদেনে এক ঘণ্টার বেশি লাগত না। এখন দুই-তিন দিন ধরে আসা-যাওয়া করতে হয়, সারাজীবন লাইনেই কাটে। শেষমেশ ৪০০ বা ৫০০ শেকেল পাই। এই টাকায় এখন কী বা কেনা যায়?’
নগদের এই সংকট কিছু মানুষের জন্য সামান্য জীবিকা হয়ে উঠেছে।
৪০ বছর বয়সী মানাল আল-সাইদি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক নোট মেরামত করে পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করেন।
তিনি বলেন, ‘কাজ করে দিনে ২০-৩০ শেকেল পাই। তাতে একটা রুটি, কিছু মটরশুঁটি, ফল কিনি। সব মিলিয়ে কেবল বেঁচে থাকা।’
অনেকে এখন ডিম বা চিনি কেনার মতো ছোট কেনাকাটাও ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে করেন, তবে বিক্রেতারা সেখানে অতিরিক্ত ফি নেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় গাজায় নগদ প্রবাহের বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। পুনর্গঠন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিস্তারিতও পরে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
এর ফলে যাদের ঘরবাড়ি, চাকরি, আত্মীয় হারিয়ে গেছে, যারা সঞ্চয় খরচ করে ফেলেছেন বা জিনিসপত্র বিক্রি করে খাবার ও ওষুধ কিনছেন, তাদের জীবন আরো কঠিন হয়ে উঠছে। অনেকেই এখন পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে দিন কাটাচ্ছেন।
৫৩ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সামির নামরুতি হাতে একটি পুরনো, প্রায় ছেঁড়া নোট দেখিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে নোটটা দেখতে কেমন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যতক্ষণ সিরিয়াল নম্বর আছে, ততক্ষণ সেটাই আমার কাছে টাকা।’