উত্তর আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরীফ শহরের কাছে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) আঘাত হানা ভূমিকম্পে অন্তত সাতজন নিহত এবং আরও ১৫০ জনের মত আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। কয়েক মাস আগেও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প ও পরবর্তী আফটারশকের কারণে আগস্টের শেষ দিকে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।
আফগানিস্তানে ভূমিকম্প কি সাধারণ ঘটনা?
পর্বতময় অঞ্চলে ঘেরা আফগানিস্তান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য বেশি সংবেদনশীল। তবে এখানকার ভূমিকম্প সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির কারণ হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৫৬০ জন নিহত হয় এবং প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৯০ সালের পর থেকে আফগানিস্তানে ৫ এর বেশি মাত্রার কমপক্ষে ৩৫৫টি ভূমিকম্প হয়েছে।
আফগানিস্তান কেন ভূমিকম্পপ্রবণ?
আফগানিস্তান ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের সীমানায় অবস্থিত। এখানে ভারতীয় প্লেটের চাপের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং আরবীয় প্লেটের প্রভাব মিলিত হয়ে এটি বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চলের একটি তৈরি করেছে। মূলত ভারতীয় প্লেটের উত্তরে সরার চাপ ইউরেশিয়ান প্লেটের সাথে সংঘর্ষের কারণে আফগানিস্তানে নিয়মিত ভূমিকম্প ঘটে।
দেশটির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলো
পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান, বিশেষ করে উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমানার কাছাকাছি অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এতে রাজধানী কাবুলও অন্তর্ভুক্ত, যেখানে ভূমিকম্পজনিত ক্ষতির গড় পরিমাণ প্রতি বছর প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার। পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধসও ঘটতে পারে, যা প্রাণহানি ও সম্পত্তি ক্ষতির মাত্রা বাড়ায়।
আফগানিস্তানের ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলো
১৯০০ সালের পর থেকে প্রায় ১০০টি ক্ষতিকর ভূমিকম্প আফগানিস্তানে রেকর্ড করা হয়েছে। সম্প্রতি বড় ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে রয়েছে ২০২২ সালের ৬ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে ১ হাজার জনের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালে এক মাসে একাধিক ভূমিকম্পে প্রায় ১ হাজার জন নিহত এবং গ্রামগুলোর ধ্বংস হয়। ২০১৫ সালে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের মোট ৩৯৯ জন নিহত হন। ১৯৯৮ সালে তিন মাসের মধ্যে দুটি ভূমিকম্পে যথাক্রমে ২ হাজার ৩০০ ও ৪ হাজার ৭০০ জন নিহত হয়।
দুর্যোগ প্রতিরোধে করণীয়
গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন নতুন ভবন ভূমিকম্প-সহিষ্ণুভাবে নির্মাণ করতে এবং পুরনো ভবনগুলোকে পুনঃস্থাপন করতে। আরও উন্নত পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরি করা, ফোল্ট লাইনের মানচিত্র তৈরি করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
সূত্র: রয়টার্স