ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে এ বছরের অন্যতম শক্তিশালী টাইফুন কালমেগির তাণ্ডব ও অতি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১১৪-তে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) এ কথা জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
বিবিসি জানায়, টাইফুন কালমেগি ফিলিপাইনের সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ সেবুর পুরো শহরগুলো প্লাবিত করেছে, যেখানে ৭১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও ১২৭ জন নিখোঁজ এবং ৮২ জন আহত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এএফপি সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সেবু প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ আরও ২৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে, যা জাতীয় নাগরিক প্রতিরক্ষা অফিসের প্রকাশিত সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত নয়।
বৃহস্পতিবার সকালে কালমেগি ফিলিপাইন ত্যাগ করে বর্তমানে ভিয়েতনামের মধ্যাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে আগের বন্যায়ই ইতিমধ্যে ডজনখানেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ ছিল ডুবে যাওয়া। ঝড়টি পাহাড়ি ঢাল বেয়ে কাদাযুক্ত স্রোত নামিয়ে এনে শহর ও নগর এলাকায় প্লাবন সৃষ্টি করেছে।
সেবুর আবাসিক এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, অনেক ছোট ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, আর সরে যাওয়া বন্যার পানিতে পুরু কাদার স্তর জমে আছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা ঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞকে “অভূতপূর্ব” বলে বর্ণনা করেছেন।
ধ্বংসস্তূপে ফিরে আসা বাসিন্দারা সপ্তাহের শুরুতে হওয়া প্রাণঘাতী বন্যার ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ম্যান্ডাউ শহরের ব্যবসায়ী জেল-আন মোইরা সার্ভাস বিবিসিকে বলেন, “আমার ঘর কয়েক মিনিটের মধ্যেই কোমরসমান পানিতে তলিয়ে যায়। আমি দ্রুত পরিবার নিয়ে বেরিয়ে আসি, সঙ্গে শুধু কিছু খাবার আর ইলেকট্রনিক জিনিস নিয়েছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “এখন বৃষ্টি থেমে সূর্য উঠেছে, কিন্তু আমাদের ঘরবাড়ি এখনো কাদায় ভরা, সবকিছু এলোমেলো। কোথা থেকে পরিষ্কার শুরু করব তা-ই জানি না। ঘরের ভেতর তাকাতেও কাঁদতে হয়।”
জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, সেবু দ্বীপে (জনসংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ) অন্তত ৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সরকারি মৃতের তালিকায় আরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ছয়জন সেনা সদস্য, যাদের হেলিকপ্টারটি সেবুর দক্ষিণে মিন্ডানাও দ্বীপে দুর্ঘটনায় পড়ে—তারা মঙ্গলবার ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা দিতে গিয়েছিলেন।
১৯ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধারকর্মী কার্লোস হোসে লানাস বিবিসিকে বলেন, “আমরা খারাপের জন্য প্রস্তুত ছিলাম, তবুও বন্যার ব্যাপকতা আমাদের হতবাক করেছে। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। সেবুর প্রায় সব নদী উপচে পড়েছিল। এমনকি জরুরি উদ্ধারকর্মীরাও এমন পরিস্থিতি আশা করেননি।”
“উদ্ধার অভিযান এত ব্যাপক ছিল যে, চারপাশের সাহায্যপ্রার্থীদের সাড়া দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছিল,” তিনি যোগ করেন।
সূত্র: বিবিসি