× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

গাজায় গিয়ে যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখল বিবিসির সাংবাদিকেরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।

০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:১৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত।

ইসরায়েলি স্থলবাহিনীর আগ্রাসনের পর গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল এখন কেবল 'ধূসর ধ্বংসস্তূপের এক বিস্তীর্ণ প্রান্তর'। বেইত হানুন থেকে গাজা সিটি পর্যন্ত ১৮০ ডিগ্রি জুড়ে ধ্বংসের চিত্র ভয়াবহ। একসময়ের হাজারো মানুষের বসতি এলাকাগুলো এখন আর চেনার উপায় নেই। এই এলাকাটিই ছিল ইসরায়েলি স্থলবাহিনীর প্রবেশ করা প্রথম অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। হামাস এই অঞ্চলে আবার ঘাঁটি গাঁড়ার চেষ্টা করায় হায়েনা বাহিনী বারবার সেখানে প্রবেশ করেছে।

ইসরায়েল কোনো সংবাদ সংস্থাকে গাজায় স্বাধীনভাবে রিপোর্ট করার অনুমতি দিচ্ছে না। তবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসন সম্প্রতি বিবিসিসহ একদল সাংবাদিককে ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে থাকা গাজা উপত্যকার একটি অংশ ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত সফর ছিল অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত, যেখানে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বা গাজার অন্য কোনো এলাকায় প্রবেশের সুযোগ ছিল না। ইসরায়েলের সামরিক সেন্সরশিপ আইনের কারণে প্রকাশের আগে সামরিক কর্মীদের রিপোর্ট দেখাতে হয় সাংবাদিকদের। তবে বিবিসির দাবি, তারা তাদের সম্পাদকীয় নীতি বজায় রেখেছে।

ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র নাদাভ শোশানি ধ্বংসের মাত্রা নিয়ে বলেন, "ধ্বংস আমাদের লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য হলো সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা।" তিনি দাবি করেন, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সুড়ঙ্গের মুখ, ফাঁদ পাতা বা আরপিজি স্টেশন ছিল এবং ৭ই অক্টোবরের হামলার সময় এই অঞ্চলটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

বিবিসি যে সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করেছে, সেটি 'ইয়েলো লাইন' (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় নির্ধারিত অস্থায়ী সীমানা) থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে। ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, যুদ্ধবিরতি চলাকালীনও তারা এই রেখা বরাবর হামাস বন্দুকধারীদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই লড়াই করছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১১শ’ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। অন্যদিকে, হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে গাজায় ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল শোশানি জানান, এই এলাকাতেই ইতাই চেনসহ কয়েকজন জিম্মির দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ইতাই চেনের দেহ এই সপ্তাহে হামাস ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে।

হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শত শত বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এর ফলে ২৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। কর্নেল শোশানি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী মার্কিন-নেতৃত্বাধীন শান্তি পরিকল্পনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে একইসাথে হামাস যেন আর ইসরায়েলি বেসামরিকদের জন্য হুমকি না হতে পারে তা নিশ্চিত করতে তারা যতদিন প্রয়োজন থাকবে।

মার্কিন-নেতৃত্বাধীন পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক ব্যক্তিদের তত্ত্বাবধানে গঠিত ফিলিস্তিনি কমিটির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তবে কর্নেল শোশানি বলেন, হামাস ক্ষমতা ও অস্ত্র ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে উল্টো কাজ করছে, তারা নিজেদেরকে আরও সশস্ত্র করার চেষ্টা করছে এবং গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

ইসরায়েলি বাহিনী সাংবাদিকদের সুড়ঙ্গের একটি মানচিত্র দেখিয়েছে, যা তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে খুঁজে পেয়েছে। তারা এটিকে মাকড়সার জালের মতো সুড়ঙ্গের বিশাল নেটওয়ার্ক বলে বর্ণনা করেছে। যার কিছু ইতোমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে, কিছু অক্ষত আছে এবং কিছু এখনও খোঁজা হচ্ছে।

এই চুক্তি গাজাকে এক অস্থির দোলাচলে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রও পরিস্থিতিটির ভঙ্গুরতা সম্পর্কে অবগত, কারণ যুদ্ধবিরতি ইতোমধ্যে দুবার ভেঙে পড়েছে। ওয়াশিংটন তথাকথিত টেকসই শান্তির দিকে জোর দিচ্ছে। তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কাছে একটি খসড়া প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বিবিসির দেখা সেই নথিতে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজার নিরাপত্তা পরিচালনার জন্য দুই বছরের ম্যান্ডেটসহ একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। তবে এই চুক্তির পরবর্তী ধাপের বিস্তারিত তথ্য এখনও অস্পষ্ট।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজাকে বিদেশি বিনিয়োগে নির্মিত মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিদেশি বিলাসবহুল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তা আজকের গাজার বাস্তব চিত্র থেকে অনেক দূরে। যুদ্ধবিরতি দুবার ভেঙে পড়া এবং ভঙ্গুর পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত 'টেকসই শান্তি'র দিকে জোর দিচ্ছে। ওয়াশিংটন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে একটি খসড়া প্রস্তাব পাঠিয়েছে, যেখানে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও গাজার নিরাপত্তা পরিচালনার জন্য দুই বছরের ম্যান্ডেটসহ একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।

তবে বর্তমানে গাজার সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের সম্প্রদায় ও ভূমির ভবিষ্যতের উপর কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে— সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

সূত্র: বিবিসি

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.