সেন্ট পিটার্সবার্গের সেরাফিমোভস্কো সিমেট্রি। রাশিয়ার পরিচিত এই সমাধিক্ষেত্রে শায়িত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হাজার হাজার মানুষ। গত মাসে ওই সমাধিক্ষেত্রেই সমাহিত করা হয় মেজর জেনারেল ভ্লাদিমির ফরোলভকে। তাঁর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সেখানেই সমাহিত করা হয়। ফরোলভ ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত রাশিয়ার উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের একজন। রাশিয়ার এই সেনা কর্মকর্তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান সেন্ট পিটার্সবার্গের গভর্নর আলেকজান্দার বেগলভ।
রাশিয়ার স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দ্য মস্কো টাইমস–এর গত শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুঃখজনক হলেও সত্যি, এ ধরনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিতি বেগলভের জন্য ‘নিয়মিত অভিজ্ঞতা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, ফরোলভকে সমাহিত করার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ইউক্রেনে নিহত আরেক উচ্চপদস্থ রুশ সেনা কর্মকর্তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। এখানেই শেষ নয়, ফরোলভের মৃত্যুর চার দিন পর ‘শেষ ঠিকানা’য় যাত্রা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিরাস বাসাকভও।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে জ্যেষ্ঠ রুশ সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, সেটি বেশ অবাক করার মতো।
মস্কো টাইমস ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বেশ কয়েকজন বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, রুশ বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ইউক্রেনে রাশিয়ার পরিকল্পনা ও সামরিক অভিযান বাস্তবায়নের অগ্রগতি কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনা যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইরত সেনারা মানসিকভাবে বড় ধাক্কা খেয়েছেন। নিরপেক্ষ সামরিক বিশ্লেষক পাভেল লুজহিন মস্কো টাইমসকে বলেন, ‘প্রত্যেক জেনারেলের মৃত্যুই রুশ সামরিক বাহিনীকে কম কার্যকর করে তোলে।’
ইউক্রেনে এ পর্যন্ত ১২ রুশ জেনারেলের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফরোলভ ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদন অনুসারে, ১২ জেনারেলের সবাই যুদ্ধ শুরুর ২ মাসের মধ্যে মারা গেছেন, যা আফগানিস্তানে ১০ বছরের সামরিক অভিযানে নিহত সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক জেনারেলদের সংখ্যার দ্বিগুণ।
ইউক্রনে নিহত রাশিয়ার অন্যান্য উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন মেজর জেনারেল আন্দ্রেই সুখোভেৎস্কিও। গত মাসে তাঁর মৃত্যুর কথা প্রকাশ করে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম। দুই লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াকভ রেজান্তসেভ ও আন্দ্রেই মর্দভিচেভ নিহত হওয়ার কথাও জানা গেছে। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার দখল করা খেরসন শহরের কাছে চোরনোবাইভকা বিমানঘাঁটিতে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে।
মস্কো অবশ্য বেশ কয়েকজন রুশ সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার খবরে আপত্তি জানিয়েছে। এই যেমন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় চ্যানেল ‘ওয়ান’ মর্দভিচেভের মৃত্যুর খবরকে ‘আরেকটি বানোয়াট’ ঘটনা বলে প্রচার করে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা যা–ই হোক, যুদ্ধে রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তার যেকোনো ক্ষতি যুদ্ধ পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটাতে যথেষ্ট। আর ইউক্রেনে সেটিই হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্ষয়ক্ষতি ক্রেমলিনকে যুদ্ধ নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবাবে। কারণ, ইউক্রেনের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলার পর পূর্ব ইউক্রেনেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটাতে রুশ বাহিনী সংগ্রাম করছে।
রুশ সামরিক বিশ্লেষক লুজহিন বলেন, ‘নিহত (রুশ) সেনা কর্মকর্তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে কয়েক দিন এমনকি অনেক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।’
তবে যখনই হোক, নিহত জেনারেলদের শূন্যস্থান পূরণ সহজ হবে না। কারণ, নতুন কমান্ডারদের যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, অধীনস্থদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে এবং সামরিক পরিস্থিতির পুরো বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে।
রাশিয়ার নিরপেক্ষ গণমাধ্যম মিডিয়াজোনা গত মাসে প্রতিবেদন করে। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধে অন্তত ৩১৭ জন রুশ কর্মকর্তা মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়, যাঁদের এক–তৃতীয়াংশই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে আছেন মেজর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও কর্নেল।
বিশ্লেষক ক্রানি-ইভান্সের মতে, জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের মৃত্যু কেবল সাময়িক ক্ষতি নয়, দীর্ঘ মেয়াদে এটা সামগ্রিকভাবে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সক্ষমতায় প্রভাব ফেলবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh