শ্রীলঙ্কায় চলমান সংকটের শুরু ২০২০ সালের গোড়া থেকে। বিশ্বজুড়ে কোভিড মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত পর্যটন। কোভিড মহামারিতে বার্ষিক প্রায় চার বিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ হারায় শ্রীলঙ্কা। এর ধাক্কা পড়ে অন্যান্য খাতে, যা চরম রূপে পৌঁছায় চলতি বছরের মার্চে।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমতে কমতে ১ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকে। জ্বালানি আমদানি করতে না পারায় দৈনিক প্রায় সাত ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হয় পুরো শ্রীলঙ্কায়।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য চীনকে দায়ী করে সরব হয়ে ওঠে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। একই সঙ্গে কলম্বোর পাশে দিল্লির সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার খবর প্রকাশ হতে থাকে গুরুত্ব দিয়ে।
নয়াদিল্লির এক সূত্র ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ডকে জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কা সরকারের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখবে ভারত এবং আগামীতে যেই-ই দেশটির ক্ষমতায় আসুক, ভারত দেশটির জনগণের পাশে দাঁড়াবে। ভারত গত কয়েক মাসে শ্রীলঙ্কাকে দুটি ঋণসহায়তা দিয়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে প্রথমবার ১০০ কোটি রুপি আর জ্বালানি কেনার জন্য ৫০ কোটি রুপি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভারত গত কয়েক মাসে সার্ক কাঠামোর অধীনে শ্রীলঙ্কায় ৪০ কোটি ডলারের কারেন্সি অদলবদল করেছে। দ্বীপ দেশটির এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (এসিইউ) ৫১ কোটি ৫২ লাখ ডলারের দেনাও পিছিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
স্বাধীনতার পর থেকে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ভারতের এ সমর্থন কৌশলগতভাবে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে চীনের কাছে হারানো অবস্থানটি ফিরে পেতে শুরু করেছে নয়াদিল্লি।
শ্রীলঙ্কার সরকারপ্রধানের দায়িত্বে টানা দুইবার (২০০৫-১৫) থাকা মাহিন্দা রাজাপাকসের দ্বিতীয় মেয়াদে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে প্রভাব বাড়াতে সক্ষম হয় চীন। আর এই প্রভাব ভারতকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে।
ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহিন্দা ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থ উপেক্ষা করে চীনকে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের মতো কৌশলগত অবস্থান উন্নয়নের অনুমতি দেন। তিনি চীনের পিপল লিবারেশন আর্মি নেভির দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে কলম্বো বন্দরে নোঙর করার অনুমতিও দিয়েছেন। এসব ঘটনা নয়া দিল্লির ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২০১৯ সালের নভেম্বরে গোতাবায়া প্রেসিডেন্ট ও মাহিন্দা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর শ্রীলঙ্কা চীনের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়ে। দৃশ্যত চীনের নির্দেশেই রাজাপাকসে সরকার কলম্বো বন্দরের পূর্ব কনটেইনার টার্মিনালের উন্নয়নে ভারত ও জাপানের সঙ্গে করা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি বাতিল করে।
এরপর শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে কলম্বো পোর্ট সিটি ইকোনমিক কমিশন বিল পাস হয়, যা ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করে চীনকে একটি ‘উপনিবেশ’ স্থাপনের সুযোগ করে দেয়।
নয়াদিল্লি সিএইচইসি পোর্ট সিটি কলম্বো নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ ভারতের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ৩০০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে থাকা বন্দর শহরটির চীনের একটি বৈদেশিক উপনিবেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, কলম্বোর সঙ্গে নয়াদিল্লির ধীরস্থির ও শ্রমসাধ্য কূটনীতির ফল পাওয়া গেছে। ভারত মহাসাগরে চীনের কাছে হারিয়ে ফেলা অবস্থান ফিরে পেতেও ভারত কিছুটা সাফল্য পেয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের আদানি গ্রুপকে ওয়েস্ট কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের দায়িত্ব দেয় শ্রীলঙ্কা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh