সরকার ব্যবস্থায় সামরিকীকরণে পাকিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা নিয়ে প্রকাশিত হলো রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমানের নতুন বই ‘পাকিস্তান অন দ্য ব্রিংক’।
শনিবার ঢাকার লেকশোর হোটেলে বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা পাকিস্তানের নিষ্ক্রিয় সরকার ব্যবস্থা, ক্ষয়িষ্ণু বিচারব্যবস্থা এবং সামরিক শাসনের এক নির্মম পরিণতির কথা তুলে ধরেছেন।
আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের রাজনীতিকে কেন্দ্রে রেখে লেখক ওয়ালিউর রহমান গবেষণাভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে সেনা নিয়ন্ত্রিত দেশটির সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায় তুলে ধরেছেন।
অধ্যাপক হারুন বলেন, নিজের কূটনীতিক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে পাকিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতির ব্যর্থতার ওপর আলোকপাত করেছেন লেখক ওয়ালিউর।
বইয়ের পর্যালোচনায় পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের উত্থান এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধংস করে দেয়ার পেছনে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের বিষয় তুলে ধরেন এই শিক্ষাবিদ।
রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান ১১ বছর ধরে গবেষণা করে বইটি লিখেছেন উল্লেখ করে অধ্যাপক হারুন বইয়ের নতুন কিছু নতুন তথ্য সংযোজনের পরামর্শ দেন।
লেখক ওয়ালিউর রহমান বলেন, বইয়ের বিষয়বস্তু হিসেবে পাকিস্তানের শাসন ও নীতি প্রণয়নে সামরিক বাহিনীর প্রাধান্যকে চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি এমন একটি সমস্যা যা পাকিস্তান রাষ্ট্রকে চিরস্থায়ী সংকটে ফেলেছে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে রেখেছে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তার বক্তব্যে পাকিস্তানকে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের রপ্তানিকারক হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে পরাজয়ের গ্লানি এখনো ভুলতে পারেনি পাকিস্তান। এখনো বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্টায় আছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি। আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ করবো ঢাকায় পাকিস্তানের দূতাবাসে আরো বেশি নজরদারি বাড়াতে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিন গুণীজনকে সম্মাননা জানান রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গবেষক মফিদুল হক, ডক্টর এমএ হাসান এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
অতিথিদের মধ্যে আরো আলোচনায় অংশ নেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বিআইএসএসের চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, বাংলাদেশ হ্যারিটেজ ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারপার্সন শাহরুখ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমানের লেখায় প্রকাশ পেয়েছে দুর্নীতির অভেদ্য জটিল জালে জড়িয়ে পড়া পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থা।
তিনি আলোকপাত করেছেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলোর করুণ পরিণতির ওপর। বিস্মিত হতে হয়, কীভাবে একটি রাষ্ট্র সত্য-ন্যয়ের পথ পরিত্যাগ করে আইনের শাসনকে নিছক এক পরিহাসে পরিণত করার খেলায় মেতে উঠা দেখে। এ যেন এক জাতির পতনকে হায়ি সিলমোহর পড়ানোর প্রক্রিয়া।
অ্যাম্বাসেডর ওয়ালিউর রহমানের গভীর বিশ্লেষণ এবং লেখনীর তীক্ষ্ণ ধারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের পরিণতি। লেখকের ভাষায় পাকিস্তান রাষ্ট্র সর্বদাই রহস্যের ঘেরাটোপে মোড়া এক গভীর সংকট।
ওয়ালিউর রহমানের গবেষণাভিত্তিক লেখনীতে উঠে এসেছে রাষ্ট্র বিনির্মাণের কুশলীদের জন্য এক ধোঁয়াশা, অচেনা পথ। মোহম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন সংকুচিত হয়েছে ক্রমাগত। শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে পাকিস্তানের জনগণের কার্যকর গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বারে বারে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সেনাপ্রভাব পাকিস্তানকে করেছে গ্যারিসন স্টেট। সেনাশাসনের কষাঘাতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পরিণত হয় সন্ত্রাসের কেন্দ্রবিন্দুতে।
ওয়ালিউর রহমান তার এই গ্রন্থে উন্মোচন করেছেন পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার অন্ধকারাচ্ছান্ন অধ্যায়। প্রকাশ করেছেন বিচারব্যবস্থার পেছনে বিভীষিকাময় সত্য, চমকপ্রদ গোপন রহস্য। যারা অন্ধকারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল তাদের অকথিত গল্পগুলো আলোর দেখা পেয়েছে ‘পাকিস্তান অন দ্য ব্রিংক’ গ্রন্থে।
বিস্তৃত গবেষণা এবং দীর্ঘদিনের গভীর পর্যবেক্ষণ উপস্থাপিত হয়েছে এই গ্রন্থের প্রতিটি ছত্রে। পাকিস্তানের অতীত থেকে বর্তমানের অশুভ শক্তির মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে এই গ্রন্থে।
রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎপরতার প্রতিবাদে ১৯৭১ সালে সুইজারল্যান্ডে পাকিস্তান দূতাবাস থেকে পদত্যাগ করেন। তার কর্মজীবন কূটনীতি এবং শিক্ষকতায় বিস্তৃত। কূটনৈতিক পরিষেবাতে জেনেভা, নিউ ইয়র্ক, জাকার্তা, রোম, জেদ্দা এবং তিউনিসিয়ার মতো শহরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারে গঠিত কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উপদেষ্টা হিসেবে সহযোগিতা করছেন তিনি।
ওয়ালিউর রহমানের অন্যান্য বইয়ের মধ্যে ফরগটেন ওয়ার ফরগোটেন জেনোসাইড, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩ আইনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস; ট্রানজিশন অব ডেমোক্রেসি; ইউএন উই বিলিভ এবং অন্যান্য প্রবন্ধ; ডিপ্লোম্যাটস ডায়েরি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh