× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সুদীর্ঘ আশি বছরের এক বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য জীবন

কামাল সিদ্দিকী বাবু

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:২০ পিএম । আপডেটঃ ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:২২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত।

বাউন্ডুলেপনায় কবি বেলাল চৌধুরী বাংলার আরেক দুঃখী নজরুল। তিনি ‘হাওয়ায় হাওয়ায় নিরুদ্দেশ’ হয়েছেন আবার ‘সাত সাগরের ফেনায় ফেনায়’ নিজেকে মিশিয়ে দিয়েছেন। লেখালেখি, সাংবাদিকতা, পত্রিকা সম্পাদনা, কুমিরের চাষ, পাহাড় বন জঙ্গলে ঘোরাঘুরি, মাছ ধরা, সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া-কী করেননি তিনি! বাংলার ফুল-পাখি, কাদামাটি, সবুজ প্রকৃতির রং -সবকিছুর নির্যাস তিনি নিয়েছেন প্রাণভরে।১৯৭৩ সালের এপ্রিলে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের লক্ষ্যে প্রথম ভারত বিচিত্রা প্রকাশ করা হয়। পত্রিকাটি সম্পাদনার দায়িত্ব পান বেলাল চৌধুরী। যদিও আগের থেকেই তিনি স্বনামে খ্যাতি পেয়েছেন কিন্তু বিনা মূল্যের ভারত বিচিত্রা তাকে বাঙালি পাঠকের ঘরে নতুনভাবে প্রবেশাধিকার দিল। সেসময় ভারত বিচিত্রা  একেবারেই বিনি পয়সায় শিক্ষার্থীদের  কাছে পাঠানো হতো। কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে ডাকবাক্সে ফেলে দিলেই প্রতিমাসেই ভারতবিচিত্রা  নিশ্চিত। এই পত্রিকার মাধ্যমে ভারতের সাহিত্য সংস্কৃতি যেমন চোখেরে সামনে তেমনি ভারতের বিভিন্ন সাহিত্যেকের জীবনের গল্পও ছাপা হতো। তাই অনেকেরই কাছে ভারতবিচিত্রা বিশেষ অবস্থান তৈরি করে। কিন্তু যার হাত ধরে এই মহাযজ্ঞ সেই তিনিই রয়েযোন পত্রিকাটির প্রিন্টার্স লাইনে। অনেকেই সেটি দেখে জানে কিন্তু সরাসরি যোগাযোগর কোন মাধ্যম তৈরি হয় না। এরই মধ্যে পত্রিকার গ্রাহক কলোবর বাড়ানো হয়। তখন ব্যক্তিগত নামেও পত্রিকাটি পাঠানো শুরু হয়। দিন বদলে যায় একসময় পত্রিকাটি অনেকটাই দুর্লভ হয়ে পড়ে। তখন ব্যাক্তিগতভাবে নয় সামষ্ঠিক ভাবনায় সরবরাহের নীতি নেওয়া হয়। পত্রিকাটি বৃহত্তর পাঠকের পাঠ রঞ্জনের জন্য পাঠাগার ভিত্তিক সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। ভারত বিচিত্রার কাহিনী তুিলে ধরা এই প্রতিবেদনের লক্ষ্য নয় তবে যার হাত ধরে এই মহাযজ্ঞ শুরু হয় সেই বেলাল চৌধুরীকে নিয়ে এই রচনা।  যার সম্পাদিত  পত্রিকাটিতে বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রথম সারির কবি-সাহিত্যকরা লিখেছেন। ফেনী জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত শর্শদি গ্রামে ১৯৩৮ সালের ১২ নভেম্বর তার জন্ম। ছাত্রাবস্থায় বেলাল চৌধুরী জড়িয়ে পড়েন বাম ধারার রাজনীতিতে। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাগারেও যান। ষাট ও সত্তরের দশকে কয়েক বছর কলকাতায় বসবাসের সময় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা কৃত্তিবাসের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে পল্লীবার্তা ও সচিত্র সন্ধানীতে কাজ করেন। কবিতা, গদ্য, অনুবাদ, সম্পাদনা, শিশুসাহিত্য মিলিয়ে বেলাল চৌধুরীর গ্রন্থ সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। ‘বল্লাল সেন’, ‘ময়ূর বাহন’, ‘সবুক্তগীন’ ছদ্মনামেও তিনি লিখেছেন। তার কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘নিষাদ প্রদেশে’, ‘আত্মপ্রতিকৃতি’, ‘স্থির জীবন ও নিসর্গ’, ‘সেলাই করা ছায়া’, ‘বিদায়ী চুমুক’ উল্লেখযোগ্য। তার সম্পাদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জলের মধ্যে চাঁদ ও অন্যান্য জাপানি গল্প’, ‘বিশ্বনাগরিক গ্যেটে’, ‘পাবলো নেরুদা-শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি’, ‘শামসুর রাহমান সংবর্ধনাগ্রন্থ’, ‘পদাবলী কবিতা সংকলন’ ও ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু’। তিনি কলকাতা থেকে ১৯৭৪ সালে দেশে ফিরে আসেন, যোগ দেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৪ সালে একুশে পদক পান। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি মারা যান।     

বেলাল চৌধুরী (জন্ম : ১২ নভেম্বর, ১৯৩৮, মৃত্যু: ২৪ এপ্রিল, ২০১৮) বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আবির্ভূত একজন আধুনিক বাঙালি কবি যাকে ষাট দশকের সঙ্গে চিহ্নিত করা হয়। তিনি সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক এবং সম্পাদক হিসাবেও খ্যাতিমান। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০১৪ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।এবং ১৯৮৪ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য অর্জন করেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

তার জন্ম ১৯৩৮ সালের ১২ই নভেম্বর বাংলাদেশের ফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলার অন্তর্গত শর্শদি গ্রামে। তার পিতা রফিকউদ্দিন আহমাদ চৌধুরী ও মা মুনীর আখতার খাতুন চৌধুরানী। তিনি দীর্ঘকাল ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃক প্রকাশিত ভারত বিচিত্রা পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

উল্লেখযোগ্য কাজ

বত্রিশ নম্বর, মৃত্যুর কড়ানাড়া, আমার কলকাতা, নিরুদ্দেশ হাওয়ায় হাওয়ায়, জীবনের আশ্চর্য ফাল্গুন, যাওয়ার আগে আরেক চুমুক, সেলাই করা ছায়া, যে ধ্বনি চৈত্রে, শিমুলে

পুরস্কার ও সম্মাননা

একুশে পদক (২০১৪), বাংলা একাডেমি সাহিত্য (১৯৮৪)

মৃত্যু

২০১৭ সালের আগস্টে কিডনিজনিত সমস্যার কারণে বেলাল চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি হন। তারপর থেকেই শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হতে থাকে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল এবং ২৪ এপ্রিল বেলা ১২টায় ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর জেলার অন্তর্গত শশর্দি গ্রামে ছায়া সুনিবিড় এক দিঘির পাড়ে উনার অন্যান্য আপনজন দের পাশে দাফন করা হয়।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.