তোমরা আমাকে কেউ স্বাধীনতার গল্প শোনাতে এসো না
তোমরা কেউ শোনাতে এসো না ৭ মার্চের অগ্নিঝরা বিকেলে
কী করে গর্জমান ঢেউয়ের ভেতর থেকে উত্থিত হলো একটি
অবিনাশী কণ্ঠস্বর
আর আকাশ ফাটানো বজ্রের হুংকার কেঁপে উঠলো পৃথিবীর মাটি
সেদিন সেই অপরাহ্নবেলায় তোমাদের সঙ্গে-সঙ্গে রমনায়
আমিও ছিলাম এক সাহসী যুবক;
সেদিন সেই রৌদ্রস্নাত মাঠে দুপুর থেকেই ছুটে আসছিল
গাঁয়ের চাষি, কারখানার শ্রমিক, মধ্যবিত্ত নরনারী,
রথখোলা ও কান্দুপট্টির বেশ্যা, লজ্জাবতী গৃহবধূ, কবি,
দুর্বিনীত লেখক, সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীসহ দলীয় নেতাকর্মী;
এমনকি জেলখানার গরাদ ভেঙে পালিয়ে আসা দুর্ধর্ষ কয়েদি;
যেন বাংলার আকাশের সব মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছিল রমনার বুকে।
আর লক্ষ-লক্ষ মানুষের বাঁধভাঙা মিছিলে ডুবে যাচ্ছিল
ঢাকার সমস্ত পথঘাট, রাজপথ, রমনার সম্পূর্ণ উদ্যান।
সকলের কণ্ঠে-কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল একটি মাত্র
আবিনাশী স্লোগান, ‘জয় বাংলা’।
তাদের হাতে ছিল নানা রঙের, নানা বর্ণের তীক্ষ্ণ হাতিয়ার,
মনে হচ্ছিল, বিসুভিয়াসের ভয়ংকর লাভা থেকে উদ্গীরিত
অগ্নিশিখা অকস্মাৎ গিলে ফেলবে সম্পূর্ণ পৃথিবী।
অপেক্ষার ক্লান্তি নেই, অগ্নিদগ্ধ পাঁজরে দাউ-দাউ জ্বলছে আগুন
একটু-একটু করে বয়ে যাচ্ছে প্রত্যাশার প্রবল সময়
তখনো আসেনি সেই দীপ্ত রাজকুমার
যাঁর ডাকে বাংলার নদী-মাঠ, গ্রাম-গঞ্জ, হাট-ঘাট,
এমনকি তন্দ্রা থেকে জেগে উঠে একটি মাঠের দিকে ছুটে চলে
এসেছিল সব ঘাসফুল; একটি কিশোরী একা
অসংখ্য গোলাপে গাঁথা সুরভিত মালাগুলো হাতে নিয়ে বিস্ময়ে
তাকিয়ে ছিল জনস্রোতে ভাসমান মঞ্চের দিকে;
খালি গায়ে একটি কিশোর একা টিএসসির মোড়ে এসে
গাইছিল বাংলার জাগরণী গান;
ঠিক তক্ষুণি লক্ষ কণ্ঠের উদ্দীপ্ত স্লোগানে-স্লোগানে
ভরা সমুদ্রের ঢেউয়ের ভেতর দিয়ে উদ্ধত ভঙ্গিমায়
মঞ্চে উঠে এসেছিলেন আমাদের প্রিয় সেই দৃপ্ত রাজকুমার।
গায়ে তাঁর সফেদ পাঞ্জাবি, পরনে চির শুভ্র পায়জামা,
আর সারা শরীরে আত্মীয়ের মতো জড়িয়ে থাকা
দীপ্ত কালো কোট।
ব্যাকব্রাশ চুল, মুখে সেই উদ্দীপ্ত ভঙ্গিমা, মাইকের
সামনে এসে দাঁড়ালেন যেই,
সঙ্গে-সঙ্গে সম্পূর্ণ ময়দান কাঁপিয়ে লক্ষ-লক্ষ মানুষের
গগনবিদারী চিৎকারে মুখরিত হয়ে উঠল বাংলার আকাশ-বাতাস।
তারপর শান্ত নদীর মতো নিঃস্তব্ধতা নেমে এল মার্চের বিকেলের মাঠে।
একটি কণ্ঠ থেকে কী গান আসবে ভেসে সে রকম প্রতীক্ষায়
কেটে যাচ্ছে নিঃশব্দ প্রহর,
সংশয়ে দুলে উঠছে প্রাণ, অশ্রুতে ভিজে যাচ্ছে চোখ;
সেই মুহূর্তে প্রিয়তম বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হলো সেই
মর্মভেদী বাণী :
“এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
তখন থেকেই আমরা মুক্ত হলাম, তখন থেকেই
স্বাধীনতা শব্দটি আকাশ-বাতাস, পৃথিবী এবং সৌরম-ল ছাপিয়ে
ছড়িয়ে গেল ২৬ মার্চের মধ্যরাতের দিকে,
তারপর এলো সেই ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।
পৃথিবীর মানচিত্রে সূর্যোদয়ের মতো ফুটে উঠল
নতুন এক স্বদেশের নাম :
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh