কুড়িগ্রামের চিলমারীতে স্কুল পড়ুয়া কিশোরদের জোটবদ্ধ করে চাঁদাবাজি, মারামারিসহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টির অভিযোগ ওঠেছে এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন নির্যাতনের শিকার চিলমারী উপজেলার পাত্রখাতা গ্রামের মো: দুলাল মিয়া ও তার পরিবার।
সম্প্রতি এলাকায় আধিপত্য দেখাতে এক নিরীহ পরিবারের ওপর কিশোরদের দিয়ে অতর্কিত হামলা করেন তিনি। এতে দুলাল নামের একজনের ডান হাতের কবজি ভেঙ্গে যায়। এসময় গুরুতর আহত হয় তার স্ত্রী ও ছেলে। এনিয়ে একটি মামলা হয়েছে। মামলা তুলতে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে একঘরে করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন সেই স্কুল শিক্ষক। জীবনের নিরাপত্তা ও আসামীদের দ্রুত শাস্তি চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
তার অভিযোগ-চিলমারী উপজেলার মুদাফৎথানা এস.সি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক হারুনুর রশিদ এই কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান। তিনি উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই পদের প্রভাব খাটিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে থাকে। এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গেও জড়িত তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে এসব করছেন ওই শিক্ষক। তার ভয়ে এলাকার মানুষ কোনো কথা বলতে পারেন না। একজন শিক্ষা কারিগর হয়ে তিনি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনিময়, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দিকে ধাপিত করছেন।
কান্নজড়িত কণ্ঠে লিখিত বক্তব্যে দুলাল মিয়া আরো বলেন, আমি ভিকটিম, আমি নির্যাতনে শিকার। গত ১ নভেম্বর হারুনুর রশিদ তার কিশোর গ্যাং দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার উপরে হামলা করে। চাঁদা না পেয়ে ও ছেলেকে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্য করতে না পেরে রড ও লাঠি দিয়ে এলাপাথারি মেরে আমার ডান হাত ভেঙ্গে দেয়। আমার স্ত্রী আছিয়া বেগম ও ছেলে জিহাদ হোসেনকে মেরে রক্তাক্ত জখম করে। আমাদের হাসপাতালেও ঠিকমত চিকিৎসা নিতে দেয়নি কিশোরগ্যাং প্রধান হারুন। টানা ২২দিন অসহনীয় ব্যাথা নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের বিছানায় ছিলাম। প্রথম দিকে থানায় মামলা নিতে না চাইলেও সাংবাদিকদের সহযোগীতায় চিলমারী থানায় মামলা করি। যার নং ০৩/৮৮, তারিখ ১ নভেম্বর’২১, চিলমারী মডেল থানা।
তিনি আরো বলেন, মামলা হওয়ার পর গত ১৪ নভেম্বর হারুনসহ অন্যান্য আসামীরা আদালতে জামিন নেন। এরপর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমাকে মারার উদ্দেশ্যে একাধিকবার আমার বাসায় যায়। আমাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের অকথ্য গালিগালাজ, ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসে। সেই থেকে আমি গা ঢাকা দিয়ে আছি।
এছাড়াও দুলাল মিয়া হারুনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন। তার ভাষ্যমতে- এলাকায় দীর্ঘদিন থেকেই চিহ্নিত চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত হারুন। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি হওয়ার পর সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এলাকার মাদক ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নেয়া, ভুমিহীন মানুষের সরকারী ঘর দেয়ার কথা বলে জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার করে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করা, বিচারের নামে ঘুষ খাওয়া, জমি সংক্রান্ত মামলা কিনে লোকজন দিয়ে অবৈধ দখলে নেয়া, মামলার বাদি-বিবাদীর পক্ষ নিয়ে টাকা খাওয়া, মাসের পর মাস স্কুলে না গিয়ে অপকর্মই তার প্রধান পেশা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি নিজের ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও আসামীদের জামিন বাতিল করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক হারুনুর রশীদ হারুন জানান, অভিযোগকারী একই ওয়ার্ডের বিএনপি’র ওয়ার্ড সভাপতি ও মামলাবাজ মানুষ। তার স্কুল পড়–য়া পুত্র জাহিদ হোসেন ওয়ার্ডে ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ চাওয়া নিয়ে অন্যান্য ছেলেদের সাথে বসচা হয়। এনিয়ে সংঘর্ষ হলে উভয় পক্ষে বেশ কয়েকজন আঘাতপ্রাপ্ত হন। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। পরে এসে ঘটনা জানতে পারি। আমার সুনাম ক্ষুন্ন করতে আমাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
চিলমারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আমার উপজেলায় কিশোর গ্যাং বলতে কিছু নেই। আমরা এটি মাথাচাড়া করতে দেইনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh