‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অবলম্বনে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘একটি দেশের জন্য গান’ এর প্রথম প্রদর্শনী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁও এর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন খ্যাতিমান অভিনেতা, সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং এই প্রামাণ্যচিত্রে ভোকালিস্ট আসাদুজ্জামান নূর; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু।
আলোচনা পর্বে প্রামাণ্যচিত্র ‘একটি দেশের জন্য গান’ এর নির্মাণশৈলীর প্রশংসা করেন বক্তারা। বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ যে ভূমিকা রেখেছিলো তা অনবদ্য। সেদিন বিদেশি বন্ধুরা এভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত এদেশের পাশে না দাঁড়াতে এই কনসার্টটি সফল করতে যে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন তা ঐতিহাসিক এক অধ্যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্করের অনুরোধে ঐতিহাসিক সেই কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন দুনিয়াজোড়া সাড়া জাগানো ব্যান্ডদল দ্য বিটলসখ্যাত জর্জ হ্যারিসন।
সেদিনের সেই চ্যারিটি শো এর আয়োজনকে ঘিরে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নির্মাণ করেছেন লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিন। প্রামাণ্যচিত্রটির বাংলাদেশে প্রদর্শনীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদ সারাবেলাকে জানান, ‘১৯৭১ সালের ১ আগস্ট, রোববার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের বিশ্বখ্যাত ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে সেই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সাড়া জাগানো সেই কনসার্টের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী হওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। এছাড়া কনসার্টের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমতও তৈরি করতে চেয়েছিলেন আয়োজকরা। ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর ৫১ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে এই প্রদর্শনীটি করতে পেরে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। পাশাপাশি একাত্তরে বাংলাদেশের অস্তিত্বের সংকটময় পরিস্থিতি বিদেশি বন্ধুদের অবদান তুলে ধরার এই কাজে যুক্ত থাকার সুযোগ পেয়ে একজন বাঙালি হিসেবে আমি গর্ব বোধ করছি।
নির্মাতা বলেন, ‘আমাদের ত্যাগ, বেদনা, গৌরব আর বিজয়ের প্রতীক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। অনবদ্য আর অসাধারণ কারুকার্যে গড়ে ওঠা এই ভবনটি যেনো ইতিহাসের সেরা একটি বই। যেখানে রক্তের অক্ষরে লেখা রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথামালা। সেখানে প্রামাণ্যচিত্রটির প্রদর্শিত হওয়া- আমার জন্য ভীষণ আবেগের, অসাধারণ অনুভূতির।’
শামীম আল আমিন জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বিদেশি বন্ধু বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্মাননাও জানিয়েছে। এ নিয়ে আরও অনেক কাজ করার রয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে বিদেশি বন্ধুদের অসামান্য একটি উদ্যোগের কিছুটা হলেও জানতে পারবে। বাংলায় নির্মিত হলেও প্রামাণ্যচিত্রে রয়েছে ইংরেজি ও বাংলা সাবটাইটেল।
পরিচালক আরও জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকে অংশবিশেষ রয়েছে প্রামাণ্যচিত্রে। বর্তমান সময়ের নিউইয়র্ক, ৫০ বছর আগের নিউইয়র্ক এবং কনসার্টের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে এতে। এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিডিওচিত্র, পাক বাহিনীর চালানো ভয়াবহতম হত্যা নির্যাতন, প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং শরণার্থী মানুষদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। চমৎকার গ্রাফিক্স ও মিউজিক ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে ‘একটি দেশের জন্য গান’।
এছাড়া কনসার্টের প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট অনেকের সাক্ষাৎকার আছে এতে। তাদের জবানিতে উঠে এসেছে সেই সময়ের চিত্র। প্রামাণ্যচিত্রটিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, খ্যাতিমান মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন, কনসার্টে অংশ নেয়া ওস্তাদ আলী আকবর খানের বড় ছেলে ওস্তাদ আশীষ খান, খ্যাতিমান লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, আমেরিকান প্রফেসর জেমস অকুয়েন, কনসার্টের প্রত্যক্ষদর্শী অভীক দাশগুপ্ত, কাজি সাহিদ হাসান এবং লিন্ডা এন্তোনুচি। এছাড়া আগে ধারণকৃত কনসার্টের দুই উদ্যোক্তা জর্জ হ্যারিসন এবং পণ্ডিত রবিশঙ্করের সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে এই প্রামাণ্যচিত্রে। রয়েছে কনসার্টের বিভিন্ন দৃশ্য, গান, ইতিহাস ও প্রতিক্রিয়ার চমৎকার বয়ান।
এই প্রামাণ্যচিত্রের অন্যতম আকর্ষণ অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর। তার অসাধারণ কণ্ঠে ৩৮ মিনিটি দৈর্ঘ্যের এই প্রামাণ্যচিত্র আরও সমৃদ্ধ হয়েছে বলে জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকরা। প্রামাণ্যচিত্রের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর কবি ও ইয়োগা আর্টিস্ট আশরাফুন নাহার লিউজা। পোস্টার ও টাইটেল অ্যানিমেশন করেছেন শিল্পী মামুন হোসাইন। সাবটাইটেল লিখেছেন সিলেট হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শফিকুল ইসলাম। ক্যামেরায় কাজ করেছেন নূর হোসেন জুয়েল এবং কায়েস খন্দকার। সম্পাদনার কাজটি করেছেন তানজির ইসলাম রানা।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে প্রামাণ্যচিত্রটির নির্মাণ কাজে যুক্ত থাকা কলাকুশলীদের সম্মাননা জানানো হয়। নিউইয়র্কের ‘ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম’ এর ব্যানারে নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনীতে সার্বিক সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
প্রামাণ্যচিত্রটি এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ কয়েকটি স্টেটে প্রদর্শিত হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি সেন্সরবোর্ডের সনদপত্র পায় এই প্রামাণ্যচিত্র। দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এর ৫০ বছর পূর্তিতে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করে নিউইয়র্কের ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম নামে একটি সংগঠন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় প্রামাণ্যচিত্রটির ৪টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি প্রদর্শনীতে দর্শকের বিপুল ভালোবাসা পেয়েছে ‘একটি দেশের জন্য গান’।
তবে গতকালই (শুক্রবার) প্রথম ঢাকার দর্শকরা প্রামাণ্যচিত্রটি সরাসরি দেখার সুযোগ পেলেন। ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে এটির আরও অনেকগুলো প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh