আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশে বাড়ছে ঠাণ্ডা জ্বর ও সর্দি। এ জ্বরে আক্রান্ত হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। সর্দি জ্বর হলেই যে করোনা আক্রান্ত হতে পারেন, এমন কোন শঙ্কা নেই। রোগীর উপসর্গ পরীক্ষা এবং খাবারে অরুচির মত কিছু অবগত হলেই তখন করোনার বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। এমনটাই বললেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা অধ্যাপক আহমেদুল কবির।
শীতের শুরুতে বৃষ্টির পাশাপাশি দেশে ঠাণ্ডা পড়তে শুরু হয়েছে। এ ঠাণ্ডায় অনেকেই জ্বর, সর্দি, ব্রংকাইটিস ও হাঁপানী এবং এলার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তা ছাড়া সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু এবং বৃদ্ধরা চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বর্হিবিভাগ ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ঠাণ্ডায় আক্রান্ত শিশুদের উপচেপড়া ভিড়। টিকেট কাউন্টারে হিসেব অনুযায়ী আগের চেয়ে রোগীর রেজিষ্ট্রেশন সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালের ১১২ ও ১১১ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে কোন বিছানা খালি নেই। মেঝেতে এবং বারান্দা করিডোরে অস্থায়ী বেড ফেলে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে রোগীর চিকিৎসা চালানো হচ্ছে।
অপরদিকে ওই হাসপাতালের নতুন ভবনের মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডগুলোতে একই দৃশ্য দেখা গেছে। ৬টি ওয়ার্ডে সর্দি, জ্বর হাপানী এবং ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ওয়ার্ডে স্থান নেই। বিছানা খালি না থাকায় করিডোরে, সিড়িকোঠায় এবং মেঝেতে রোগীর চিকিৎসা চলছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগীর বয়স পঞ্চাশের উপরে। দিনরাত ঠাণ্ডাজনিত রোগী শুধু আসছেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফ জবাব, কোন রোগী চিকিৎসা ছাড়া ফেরত যাবে না। মেঝেতে রেখে হলেও চিকিৎসা দেয়া হবে। আমরা ওই পরিবেশ দিতে না পারলেও রোগীকে সুস্থ করে বিদায় দিতে পারবো। এমনটাই আশা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আশরাফুল ইসলাম।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল,শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে একই চিত্র দেখা গেছে। ঠাণ্ডাজনিত কারণে সেখানের মেডিসিন ওয়ার্ড ও বর্হিবিভাগে ওই সংক্রান্ত রোগীর ভীড় বেড়েছে। ভর্তির পাশাপাশি বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন, অতিবৃষ্টি ও ঠাণ্ডাজনিত কারণে সর্দি জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ সংক্রান্তে হাসপাতালে শিশু ও বৃদ্ধের উপস্থিতি বেশী। তাদের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জটিল কেস হলে ওয়ার্ডে ভর্তির পর পূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে জ্বর সর্দি ও ব্রংকাইটিজ হলেই যে করোনা উপসর্গ এটা ঠিক নয়। একটু সচেতন হয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ নিয়ম মেনে চললে ঝুঁকি থাকবে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এখন প্রতিনিয়তই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসছে। সারা পৃথিবীতে আগে যেমন প্যানডেমিক বা অতিমারি ছিল, এখন সেটা হয়ে যাচ্ছে অ্যানডেমিক। রোগটি থাকবে, এই বাড়বে, আবার কমে যাবে ঠিক যেন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সর্দি জ্বরের মতো। তবে সর্দি জ্বর ইনফ্লুয়েঞ্জা হলেই করোনা এটা ভাবা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, উত্তর-পশ্চিমা দেশগুলোতে ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য প্রতি বছরই একটি করে ভ্যাকসিন নেয়া হয়ে থাকে। কারণ দেখা যায় যে, সারা বছরই ইনফ্লুয়েঞ্জা পরিস্থিতি ঠিক আছে, কিন্তু শীতকালে আবার একটু বেড়ে গেছে, তাই শীত আসার সময় যেন এই সংক্রমণ না বাড়ে, সে লক্ষ্যে প্রত্যেকে একটি করে ভ্যাকসিন নিলে নিরাপদ থাকবে। জ্বর আর সর্দি হলেই করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হবে, এটা ঠিক নয়।
এদিকে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের মহামারি রোগ বিষয়ক প্রফেসর ড. আর্নল্ড মন্টো বলেছেন, কোনটা মহামারিতুল্য (এপিডেমিক) আর কোনটা মহামারি তা নির্ধারণের কোনো মাপকাঠি নেই। বিষয়টি নির্ধারণ করা হয় চোখের দেখার ওপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, মহামারি নির্ধারণের কোনো মৌলিক আইন বা নিয়ম নেই। কোনো একটি রোগের প্রাদুর্ভাব আপনি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন তার ওপর ভিত্তি করে একে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এক্ষেত্রে পার্থক্য হলো আগের তুলনায় আমাদের টিকাগুলো অধিক কার্যকর। ভাল খবর হলো টিকার শক্তি। খারাপ খবর হলো ভাইরাসটির রূপান্তর ও বিবর্তিত হওয়ার ক্ষমতা। কেউই পূর্বাভাস দিতে পারেন না যে, করোনা ভাইরাসের ভবিষ্যত কি রকম হতে পারে। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রূপ পরিবর্তন করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সর্দি জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা এক রকম ভাইরাস। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা আর করোনা ভাইরাস এক বিষয় নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ হার খুব কম। এটি আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয়। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও টিকা গ্রহণের পাশাপাশি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমেই আমরা অতিমারিকে নির্মূল করতে সক্ষম হবো।
এবিষয়ে সংবাদ সারাবেলাকে অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেছেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাব বাংলাদেশে কিছুটা কমেছে। তবে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের একের পর এক ঢেউ জানান দিচ্ছে, সহসাই বিদায় নিচ্ছে না। বরং থেমে গিয়ে নতুন রূপ নিয়ে ফিরে আসছে আরও শক্তিশালী গতিতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে এসেছে কিন্তু আর বিদায় নেয়নি, এমন অনেক মহামারিই আমরা দেখছি। করোনা ভাইরাসও সে রকম হতে যাচ্ছে। করোনা থেকে গেলেও সেটি মহামারি আকারে থাকবে না। পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না। এমনকি হাসপাতালও ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীতে উপচে পড়বে না। তাদের দাবি, পরবর্তিতে সাধারণ সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই ছড়াবে এ ভাইরাস।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ হার খুব কম। এটি আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয়। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো মুহূর্তেই আবারও সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh