ছবি : পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সততা ও সাহসিকতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণ এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তা বিধানে শান্তি বজায় রাখতে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের বলবো আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সকলকে কঠোর পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রাম প্রতিরক্ষা ও আনসার ভিডিপির ৪৪তম সমাবেশে যোগ দিয়ে একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধান অতিথির প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব বলেন।
তিনি বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। জননিরাপত্তা রক্ষায় যেকোন অশুভ তৎপরতার মোকাবিলা করতে হবে এবং সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে আপনারা সেটা রুখে দাঁড়াবেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণও বিনিয়োগের শন্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা। সেই পরিবেশ রক্ষার জন্য সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি’।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় যেকোন প্রয়োজনে আনসার বাহিনীর সদস্যদের আহবান করা হয় এবং তারা দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন দূতাবাস থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমাদের আনসার বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ , ১৪ এবং ২০২৩ সালে আমাদের বিরুদ্ধে যখন অগ্নিসন্ত্রাস, রেলে আগুন দেয়া, রেল লাইন কেটে ফেলা,মানুষকে হত্যা করাসহ বিএনপি জামাত যে ধ্বংসাত্মক কাজ করেছিল তখন জাতীয় নিরাপত্তা বিধানে আনসার বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। এজন্য আমি সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
সরকার প্রধান বলেন, ’৯৬ সালে প্রথম সরকারে আসার পর থেকেই এই বাহিনীর উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে আজকে এই বাহিনী শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সুনাম অর্জন করে যাচ্ছে। আমাদের এই বাহিনী গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত কাজ করে থাকেন। আমরা গ্রাম উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’, এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই আনসার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। তাছাড়া যে কোন দুর্যোগ দূর্বিপাকে আনসার বাহিনীর সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের সহযোগিতা করে। কখনো ঝড়, বন্যা বা অগ্নিকা- ঘটে এরকম যে কোন ঘটনায় আমরা দেখেছি আমাদের আনসার বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ৬১ লাখ। দুটি নারী ব্যাটালিয়ানসহ এতে ৪২টি ব্যাটালিয়ান রয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পার্বত্য এলাকায় শান্তিশৃংখলা রক্ষায় এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘অপারেশন উত্তোরণ’এ দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন,তাঁর সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, অববকাঠামোর উন্নয়ন করেছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে। যেটা তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল। কারণ আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারেনা। আর সেটা তাঁর সরকার আজকে করতে পেরেছে। যে কোন অবস্থা মোকাবিলা করার মত সক্ষমতা আছে আমাদের।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক এবং আনসার ও ভিডিপি একাডেমির কমান্ড্যান্ট মো. নুরুল হাসান ফরিদী অনসার একাডেমীর অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৮০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যের মাঝে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। সুসজ্জিত প্যারেড তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। পরে তিনি কোরিওগ্রাফি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
আনসার বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করাই সরকারের কাজ।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের হাত থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময় অব্যাহত থাকবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের আনসার বাহিনীর সদস্যরা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও করে যাবেন।
ইতোমধ্যে তাঁর সরকার আনসার বাহিনীর কল্যাণে পুরাতন আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। সেখানে চাকরির শুরু থেকেই স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বার্ষিক সম্মানি ভাতা বৃদ্ধি, রেশন বৃদ্ধি,নারী সদস্যদের পোষাক পরিচ্ছদ পরিবর্তনসহ বাহিনীর আধুিনকায়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ২০০৮ থেকে টানা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ায় বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে আসতে পেরেছি। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশের কার্যক্রম শুরু হবে। তখন আমাদের আরো আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে। ২০৪১ সালে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো সেখানে আমাদের প্রত্যেকটি বাহিনী বিশেষ করে আনসার বাহিনীও সেভাবেই স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশের উন্নয়নের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা নিরাপদ করতে চাই। আমাদের গ্রামগুলোও স্মার্ট গ্রাম হিসেবেই গড়ে উঠবে। সেখানে কোন মানুষ দরিদ্র থাকবেনা, ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, আমরা ইতোমধ্যে প্রতিটি ভূমিহীন-গৃহহীণ মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি।
ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আনসার বাহিনীর বলিষ্ঠ অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যথেষ্ঠ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। ‘বাংলাদেশ গেমস’ এ পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং এই বাহিনীতে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কারণ সরকার চায় এখান থেকে উদীয়মান এবং খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ তৈরী হবে। তারা যেন দেশের জন্য আরো সুনাম বয়ে আনতে পারে সে পদক্ষেপও সরকার নেবে।
তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যেন অব্যাহত থাকে তারও ব্যবস্থা করতে চাই। কারণ মানুষের পেটের ভাতের সাথে সাথে তাদের মনোরঞ্জণের ব্যবস্থা করা এবং খেলাধূলা, শরিরচর্চার মাধ্যমে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলাও আমাদের লক্ষ্য।
ভাষা আন্দোলনের এই মাসে আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বারসহ ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদদের তিনি শ্রদ্ধভরে স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে ৬৭০ জন আনসার সদস্যের আত্মাহুতিকে এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন মুজিনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের সময় তাদের উপস্থিতি ও বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানেও আনসার বাহিনীর সদস্যদের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতার আহবানে বহুত্যাগের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট করে গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh