পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী (ঘনীভূত) হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হচ্ছে। এটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এটি ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়ে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে ‘রিমাল’। এ নামটি ওমানের দেওয়া। এর অর্থ বালু।
ঘূর্ণিঝড়টি আগামী রোববার (২৬ মে) নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হলে ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি এবং গতিপথ ও স্থলভাগ অতিক্রমের স্থান সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাবে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আগামীকালের (শুক্রবার) মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর এটি আরও ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে নিম্নচাপে পরিণত হলে আরও স্পষ্ট করে বলা যাবে, এটি কোন স্থান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে এবং এটি কোন মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হবে।’
সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম ‘রিমাল’ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি এর আগের ঘূর্ণিঝড়গুলো কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করেছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হোক, তারপর এটি কোনো জায়গা দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করবে তা আমরা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবো। কারণ, এখনো এটির কেন্দ্র পাইনি।’
‘তবে এটির (ঘূর্ণিঝড়) বড় অংশটি বাংলাদেশে আঘাত করার সম্ভাবনা দেখছি আমরা। প্রবাবিলিটি বেশিরভাগই বাংলাদেশের ওপর শো করছে। নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর এর শক্তি নিয়েও আমরা কথা বলবো। ততক্ষণ পর্যন্ত এটি পর্যবেক্ষণ করছি।’
সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হলে শুক্রবার সমুদ্রবন্দরগুলোতে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত জারি করা হবে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বাংলাদেশের স্থলভাগ থেকে এখনো কমপক্ষে এক হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পরবর্তীসময়ে উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে দেশের স্থলভাগের দিকে আসার একটা সম্ভাবনা আমরাও দেখছি।’
আজিজুর রহমান বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের দিকে মোড় নিলে আমরা সময় মতো সিগন্যাল দেবো এবং আমাদের তখন প্রিকশনারি মেজারে (পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা) যেতে হবে।’
আগামী শনিবার (২৫ মে) থেকে এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হতে পারে বলেও জানান আজিজুর রহমান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে সতর্কবার্তায়। প্রাকৃতিক নানা কারণে সমুদ্রের কোনো স্থানে কেন্দ্রাভিমুখী ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল বা লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে এ ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চলটি শক্তি সঞ্চয় করে (বাতাসের গতি বেড়ে) সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও শেষে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সুস্পষ্ট লঘুচাপ হচ্ছে ঘণ্টায় ৩১ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগের ঝোড়ো হওয়ার অঞ্চল। নিম্নচাপ হচ্ছে একটি ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪১ থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। গভীর নিম্নচাপের ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। কোনো ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ধরা হয়।
এদিকে, ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি শুক্রবারের (২৪ মে) মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর এটি উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে আরও ঘনীভূত হয়ে শনিবার (২৫ মে) নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
এরপর এটি আরও উত্তর দিকে এগিয়ে রোববার (২৬ মে) প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলেও জানিয়েছেন ভারতের আবহাওয়াবিদরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh