ছবি সংগৃহিত
জাতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের
ছদ্মবেশে জঙ্গিবাদের বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে এমনটিই বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী
ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট)
সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায়
রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেওয়া
মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃষক লীগ এর আয়োজন করে।
তিনি বলেন, জামায়াত ও শিবির
আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে এবং নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালিয়ে
যাবে। দেশবাসীকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং আমি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।
সম্প্রতি কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে শিক্ষার্থীদের দাবি শতভাগ মেনে নেওয়া হয়েছে,
সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কী যৌক্তিকতা আছে। এর পেছনে কী ছিল? কোটা আন্দোলনে জঙ্গি
ঢুকে হত্যাকান্ড চালাল, প্রাণহানি ঘটল। এ দেশের সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এর বিচার আমি জনগণের
কাছে দিলাম।
সহিংসতায় নিহতদের স্মরণ করে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জিনিস গেলে তা ফিরে পাওয়া যায়, কিন্তু জীবন গেলে তা আর ফিরে
পাওয়া যায় না।
আর যারা আপনজন হারিয়েছে, যে
মা তার সন্তান হারিয়েছে, যে সন্তান তার বাবা হারিয়েছে তার কষ্ট আর কেউ না বুঝুক, আমি
বুঝি। তিনি বলেন, এই আগস্ট মাস... বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে সেই কষ্ট নিয়ে এই বাংলাদেশে
ফিরে এসেছিলাম।
নিজের ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে
মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে এ দেশের মানুষের জন্য ফিরে আসি। তিনি বলেন, আমাদের চলার
পথ এত সহজ ছিল না। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। যেখানে গিয়েছি বাধা পেয়েছি।
কখনো সরাসরি গুলি, আক্রমণ, জনসভায় বড় বোমা পুঁতে
রাখা-প্রতিনিয়ত এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে চলতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মী
জীবন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বলেন, আন্দোলনের সময় চরম মিথ্যাচার করা হলো। সন্ত্রাসীরা বিটিভি ভবনের মধ্যে যখন আগুন
দিয়েছে, তখন হেলিকপ্টার থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করল।
অনেক জায়গায় পুলিশ আটকা পড়েছে।
বাসার নিচে আগুন দিয়েছে। মানুষ আটকা পড়েছে। বিটিভি ভবনে আগুন দিয়ে সন্ত্রাসীরা ফায়ার
সার্ভিসের গাড়ি আসতে দেয়নি।
সব থেকে আধুনিক ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি যেতে পারল না।
আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে ১০ তলায় আগুন দেওয়া হয়েছে।
মালিকসহ আটকে পড়া লোকজন যখন
ফোন করল, আমরা হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করেছি। গাজীপুরের জাহাঙ্গীর (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর
আলম) মিছিল নিয়ে আসছিল, তার সহকর্মীকে গুলি করে মেরে উল্টো করে রাখল।
জাহাঙ্গীরকেও এমনভাবে মারা
হয়েছে, জাহাঙ্গীর আমাকে ফোন করে বলল, আপা আমাকে মেরেছে, আমি বাঁচব না, আমাকে বাঁচান।
হেলিকপ্টার দিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে
যাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই দেশবাসীকে সাবধান করেছিলাম, আন্দোলন কেন্দ্র
করে যারা জিঘাংসা চরিতার্থ করতে চায়, তারা সন্ত্রাসী-জঙ্গি; তাদের হাত থেকে কেউ রেহাই
পায়নি। শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, র্যাব, পুলিশ, সাধারণ মানুষ, শিশু কেউ রেহাই পায়নি।
আমরা যখন বিভিন্ন হাসপাতাল
দেখতে গেলাম, তখন কয়েকজন ছাত্র ছিল। বাকি সাধারণ মানুষ, পথচারী, কিছু শিশু ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বলেন, কোটাপ্রথা বাতিল করেছিল সরকার এবং এখন চাওয়ার চেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে, এর পরও
তাদের দাবি থামে না।
এর পেছনে কী ছিল? কোটা আন্দোলনে
জঙ্গি ঢুকে একদিকে হত্যাকান্ড চালাল, অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষকে সেবা দেয়...
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন তো মানুষকে বাঁচানোর জন্য, সেবা দেওয়ার জন্য, সেখানে অগ্নিসংযোগ;
বিটিভিতে অগ্নিসংযোগ।
সারা দেশকে একটা নেটওয়ার্কের
আওতায় এনেছি, সেই সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ। মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, ডাটা সেন্টার, স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাল।
সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার
যে আধুনিক গাড়ি, সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হলো। ঢাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট আগে ছিলই
না, সেটি আমি করেছি, সেখানে আগুন।
জনগণ একটু ভালো থাকবে, সুস্থভাবে
চলবে, সেসবের সবকিছুতেই আগুন দিয়ে পোড়াল। এটা কোন ধরনের আন্দোলন?
সরকারপ্রধান বলেন, আজকে যে
প্রাণহানিগুলো ঘটল, যেখানে দাবি শতভাগ মেনে নেওয়া হয়ে গেছে; সেখানে আন্দোলন চালিয়ে
যাওয়ার কী যৌক্তিকতা আছে, কার স্বার্থে, কেন? পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। শুধু হত্যা না,
কি বীভৎস দৃশ্য দেখেন। তাকে হত্যা করে পা ওপরে দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হলো।
গাজীপুরে দলের কর্মীদের তো
মেরেছেই। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছে, সেখান থেকে বের করে নিয়ে এসে পা গাছের সঙ্গে
ঝুলিয়ে রেখে তাকে গুলি করা হয়েছে। পুলিশের ওপর আক্রমণ! পুলিশ, র্যাবের গাড়ি পুড়িয়ে
দেওয়া হয়েছে।
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা
শেখ হাসিনা বলেন, চারজন শিশু মারা গেছে। অনেকগুলোর মৃত্যুর খবর আপনারা পেয়েছেন। পঁচাত্তরের
পর থেকে আমরা তো শুধু লাশের মিছিলই দেখছি। এবার দু’শর ওপর মানুষ মারা গেল।
যে স্থাপনাগুলো ভেঙেছে, মানুষ
সাময়িক কষ্ট পাচ্ছে। একটু দেরি হলেও সেসব গড়ে তোলা যাবে, কিন্তু যে জীবনগুলো ঝরে গেল,
এটা কীভাবে পাব?
কিছুটা সময় নীরব থেকে তিনি
বলেন, ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা গুলিবিদ্ধ, এ গুলিগুলো কীভাবে লাগল? তারপর মিথ্যাচার। দোতলা
বাড়ির মধ্যে জানালার কাছে ছেলেটা, তার গুলি লেগেছে।
আপনারা বলেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ঘরের মধ্যে ঢুকবে
কীভাবে? তিনি বলেন, আমাদের জ্ঞানী-গুণীরা এ আন্দোলন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কীসের সমর্থন
দিচ্ছে? দাবি যেটা ছিল, সেটা তো পূরণ হয়ে গেছে। তারপর আবার এভাবে নেমে... আসলে আঘাত
পেয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী।
কিন্তু, যারা এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী
এবং জঙ্গি কর্মকান্ড চালায়, তাতে ভুক্তভোগী হয় সাধারণ মানুষ। আহতদের যে দেখতে গেলাম,
তার প্রায় সবই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের জীবনজীবিকা কীভাবে চলবে। এভাবে একটা
নাশকতা করা, এটা তো জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড।
আওয়ামী লীগের নেওয়া নানান
উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে উঠবে এবং যে জাতি
হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নত জাতি।
আমরা যখন সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি, পাশাপাশি আমরা কী
দেখলাম? ওই পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, ওগুলো এখনো ছাড়েনি। সেখানে ধর্মান্ধতা এবং কূপমন্ডূকতা
দিয়ে একটা শ্রেণি কিন্তু ধীরে ধীরে সবার অজান্তেই গড়ে উঠেছে। যারা ওই যুদ্ধাপরাধীদের
দোসর ছিল।
দেশে গণহত্যা, লুটপাট, নারীধর্ষণ,
অগ্নিসংযোগ এসব কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সঙ্গে দোসর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, আর সে আঘাতটা আপনারা দেখলেন। কোটা আন্দোলনের নামে যখন সব রাস্তায় বেরিয়ে
এলো, আমরা তাদের বললাম, কোটা আন্দোলন হয়েছিল ২০১৮ সালে।
আমরা এটা মেনে নিয়ে বাতিল
করে দিয়েছিলাম কোটা পদ্ধতি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মামলা করল, সেখানে আমার
করা প্রজ্ঞাপনটা বাতিল করে দিলেন হাই কোর্ট। আবার কোটা ফিরে এলো।
সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ
থেকে অ্যাপিলেট ডিভিশনে আপিল করা হলো। আপিল করা হলে হাই কোর্টের রায়টা সাসপেন্ড করে
দেওয়া হলো। কাজেই আবার সেখানে কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেল এবং পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখও
দেওয়া হলো।
৫ জুন এ রায় হয়েছিল। পুরো জুন মাস চলে গেল। জুলাই
মাসের ৭ তারিখ থেকে হঠাৎ দেখি, আবার কোটার জন্য আন্দোলন-যখন কোটা পদ্ধতি নাই।
জামায়াত-শিবিরকে জঙ্গি সংগঠন
হিসেবে মোকাবিলা করতে হবে : নিষিদ্ধের পর জামায়াত-শিবিরকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে মোকাবিলা
করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা তো জঙ্গিবাদী হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে
আবার ধ্বংস করার চেষ্টা করবে।
সে কারণে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে এদের মোকাবিলা করা ও
মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা সবাই মিলে করতে হবে। কারণ বাংলার মাটিতে জঙ্গির ঠাঁই হবে
না। সেভাবে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমি দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই এবং
দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি
বারবার আঘাত আসবে, আমি পরোয়া করি না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, একদিন নিয়েও যাবেন। কিন্তু
যেখানে মানুষের জন্য কল্যাণের জন্য কাজ আমরা করেই যাব।
তিনি বলেন, ১ আগস্ট রক্তদান
কর্মসূচির মাধ্যম আমরা শোকের মাস শুরু করেছি।
সব সংগঠনের নেতাদের এ শোকের
মাসে শুধু শোক পালন নয়, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের
পাশে দাঁড়িয়ে জাতির পিতার আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে।
জাতির পিতা তো এ জাতির জন্য
কাজ করে গেছেন। কাফনের কাপড় ছাড়া কিছুই নিয়ে যাননি। শুধু দিয়েই গেছেন। তাঁর সে আদর্শ
আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।
সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের ঢাল
হিসেবে ব্যবহার করেছে জামায়াত-শিবির : কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে
কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জামায়াত-শিবির তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের
ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল গণভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত
ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্তেনিও অ্যালেসান্দ্রো সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মো. নুরএলাহি মিনা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বলেন, তারা (জামায়াত-শিবির) ছাত্রদের শিল্ড (ঢাল) হিসেবে ব্যবহার করেছে। জামায়াত-শিবির,
বিএনপি আগুন দিয়ে পোড়ানো ও গণহত্যায় অভ্যস্ত।
বাংলাদেশ টেলিভিশন-বিটিভি
ভবন ধ্বংসসহ সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রধানমন্ত্রী
যেভাবে সামাল দিয়েছেন ইতালির রাষ্ট্রদূত তার প্রশংসা করেছেন। রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ
করেন সাম্প্রতিক এ ঘটনার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম
এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ইতালি বাংলাদেশ
পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে চায়। পুলিশের প্রশিক্ষণ বিষয়ে ইতালির প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী
সম্মতি দিয়েছেন বলে জানান উপ-প্রেস সচিব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প
ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন,
মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রমুখ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh