গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ঢাকার দুই সিটির মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবায় বিঘ্ন ঘটছে।
সরকার পতনের পর দুই মেয়র প্রকাশ্যে নেই। ঢাকা উত্তরের মেয়র এম আতিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন, তিনি ঢাকায় আছেন। তবে অফিস করছেন না। আর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের অবস্থান সম্পর্কে কারও কিছু জানা নেই। যেসব কাজে মেয়রের সই লাগে, সেগুলো নিয়ে কীভাবে কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবছেন কর্মকর্তারা।
কাউন্সিলরের কার্যালয়ে প্রতিদিনই মানুষ আসছে, সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, কত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেই আশ্বাসও পাচ্ছেন না তারা।
এমন প্রশ্নে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব রাবেয়া গণমাধ্যমকে বলেন, “৬ তারিখ কিছু লোক এসে বাইরের ছবি ভাঙচুর করে তালা মেরে দিয়েছে। সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ। কাউন্সিলর ছাড়া তো এসব কাজ করাও যাবে না। উনার সিগনেচার লাগবে।”
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফার হদিস নেই ৫ অগাস্ট থেকেই। তিনি কবে ফিরবেন বা কোথায় আছেন, সেই প্রশ্নেরও জবাব নেই।
ঢাকা উত্তরের ৫৪ জন সাধারণ ও ১৮ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের মধ্যে দুজন করে কেবল চারজন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। বাকি সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত।
দক্ষিণের ৭৫ জন সাধারণ ও ২৫ জন নারী আসনের কাউন্সিলরের মধ্যে ১০ জন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত, একজন স্বতন্ত্র ও একজন বিজেপির রাজনীতিতে জড়িত।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকে সারাদেশে সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যে বেপরোয়া হামলা হয়েছে, তা থেকে রেহাই পায়নি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কার্যালয়ও।
বিএনপির বর্জনের কারণে ভোটে নির্বাচিতরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগপন্থি, তাদের সবার কার্যালয়ই ভাঙচুর করা হয়েছে; আগুন দেওয়া হয়েছে, অনেক জায়গায় নথিপত্র পুড়ে গেছে, লুট হয়েছে জিনিসপত্র, নিম্ন আয়ের মানুষদের সহায়তার জন্য রাখা জিনিসপত্রও নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।
এই পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবায় বিঘ্ন ঘটছে; বিশেষ করে ঢাকা উত্তরে ওয়ারিশ সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ, মৃত্যু নিবন্ধন সনদ, নাগরিক প্রত্যয়নসহ কাউন্সিলর অফিস থেকে নিতে হয় তার কিছুই পাচ্ছে না মানুষ।
ঢাকা দক্ষিণে অবশ্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ নিয়ে সমস্যা নেই, কারণ এগুলো দেওয়া হয় আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে, সেগুলো চালু আছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, “যারা পালিয়ে আছেন তাদের ফিরে আসার জন্য সরকার একটা সময় বেঁধে দেবে। ওই সময়ের মধ্যে তারা না আসলে, চিঠির উত্তর না দিলে তাদের পদ বাতিল হয়ে যাবে।"
“বাতিল হওয়ার পর কাউন্সিলররা মিলে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করবেন। আর সেটা না হলে নতুন করে নির্বাচন হবে অথবা প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে।”