ছবিঃ সংগৃহীত
দেশব্যাপী আপামর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। বাংলাদেশের জনগণ নতুন করে ফিরে পায় স্বাধীনতার সুবাস। ছাত্র-জনতার রক্তে ভেজা রাজপথের আন্দোলনে অর্জিত হয় নতুন এই স্বাধীনতা। এজন্য পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দাঁড়াতেও কুন্ঠাবোধ করেনি জাতির সূর্যসন্তানেরা। স্বৈরশাসনের এই ১৬ বছরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই শোষকরা নানভাবে বন্ধ করে দিয়েছে আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। তবে এবার সে ভয়ের উর্ধ্বে গিয়ে আওয়াজ তুলেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। হেলমেট বাহিনী ও পুলিশের বাঁধার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এসেছে দেশের সাধারণ জনতা। সবার দাবি একটাই, হাসিনা সরকারের পতন চাই। হাজারো ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অবশেষে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। আজ (৫ সেপ্টেম্বর) সেই স্বৈরাচার পতনের এক মাস পূর্তি হল।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যখন পুলিশ সহিংস হামলা চালায় ঠিক তখন থেকেই দেশের জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে। গত ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থী পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। নির্লজ্জ পুলিশ নিরস্ত্র ঐ শিক্ষার্থীর ওপর একের পর এক গুলি চালাতে থাকলে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাঈদ। এই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ তিনি। আবু সাঈদের দু'হাত প্রসারিত করে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দাঁড়ানোর ছবি হয়ে ওঠে এই অভ্যুত্থানের প্রতীক। এর পরপরই আন্দোলন আর কোটা সংস্কারের দাবিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের দাবিতে এক হয় দেশের আপামর জনতা।
তবে আবু সাঈদে থেমে থাকেনি পুলিশ। ১৬ জুলাইয়ের পরে আরও রক্তগ্রাসী ওঠে তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপরে ওপেন ফায়ার চালানো হয়। প্রথমে রাবার বুলেট ব্যবহার হলেও এবার সরাসরি ফ্রেশ রাউন্ড ফায়ার করে পুলিশ। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকশো আন্দোলনকারী নিহত হন। আহত হন হাজারেরো বেশি। এমনকি বিভিন্ন জায়গায় হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারায় বাড়ির ছাদে, বারান্দায় থাকা শিশু। এমন বর্বরতা মেনে নেয়নি দেশের মানুষ। গুলির ভয়কে উপেক্ষা করে নেমে আসে রাজপথে। অনলাইনে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। আন্দোলনে একাত্মতা জানায় দেশের সব সেক্টরের মানুষ।
এরপর গত ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এক দফা দাবির ঘোষণা দেওয়া হয়। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের এক দফা এক দাবিতে একাত্মতা পোষণ করে সারাদেশের মানুষ। ৬ আগস্ট গণভবনের উদ্দেশ্যে লংমার্চের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে হঠাৎ ঘোষণায় এই লংমার্চ ৫ তারিখে এগিয়ে আনা হয়।
এই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে সারাদেশ থেকে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে পায়ে হেঁটে গণভবনের উদ্দেশ্যে এগুতে থাকেন লাখো মানুষ। এদিন আর কোনো বাঁধাই আটকাতে পারেনি মানুষকে। গণভবনের গেট, দেওয়াল ভেঙে ঢুকে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। তবে তার কিছু সময় আগেই সামরিক হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালান শেখ হাসিনা। বিক্ষুদ্ধ জনতা গণভবনের ভেতরে থাকা জিনিসপত্র ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালায়।
এদিন জাতীয় সংসদেও ঢুকে পড়ে সাধারণ জনতার ঢল। সবার কপালে বাঁধা ছিল বাংলাদেশের পতাকা, মুখে মুক্তির হাসি। নতুন স্বাধীনতা উদযাপনে রাজপথ ছেঁয়ে যায় মানুষে। অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা স্বৈরাচারী শাসন।
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ গ্রহণ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ জন উপদেষ্টা শপথ নেন। উপদেষ্টাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে শিশু-কিশোর-যুবক নারীসহ অন্তত ১ হাজার জনের অধিক প্রাণহানি ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা-নির্যাতনে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বিষয় : আজ স্বৈরাচার পতনের ১ মাস
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh