× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চাঁবিপ্রবি’র ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল হলেও দীপু মনির চাপে গোপন রাখা হয়

মো: তুহিন ফয়েজ, মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি।

৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:৫৭ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল হয় কয়েক মাস আগে। নানা অনিয়ম ও অভিযোগের কারণে বাতিল হলেও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির চাপে তা গোপন রাখা হয়। এসব কারণে সহসাই আর হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। এদিকে জবরদখলকৃত সেই ভূমি ফেরত চাইছেন জমির মালিকরা। অন্যদিকে চাঁবিপ্রবি’র দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। অভিযোগ উঠে দীপু মনি ও সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের আলোচিত চেয়ারম্যান ‘বালুখেকো’ সেলিম খান (গত ৫ আগস্ট গণপিটুনিতে নিহত) জোরপূর্বক অনেক পরিবারকে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন।

অভিযোগ রয়েছে, মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও জোর জবরদস্তি করে সেলিম খান তার নামে ও বেনামে মাত্র ৩০ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা শতাংশ মৌজা রেইট হিসেবে জমি লিখে নেন। কিন্তু সেই জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা শতাংশ হিসেবে মৌজা রেইট দেখিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করেন। জানা যায়, চাঁদপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসকে ম্যানেজ করে জালজালিয়াতির মাধ্যমে লক্ষীপুরের মৌজা রেইট ৩০-৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করে মৌজা রেইট জারি করে সেলিম খান। শুধু তাই নয় ঐ সময় লক্ষীপুর মৌজায় অন্য সবার জন্য জমি ক্রয়-বিক্রয় ও নামজারি নিষিদ্ধ করে রাখেন।

মন্ত্রী দীপু মনির ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু এবং সেলিম খানসহ মন্ত্রির আশির্বাদপুষ্ট ঐ জায়গায় ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিলসহ নানা জালিয়াতি করে ৫ শ’ ৬০ কোটি টাকা দুর্ণীতির মাধ্যমে সরকার থেকে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে শেষ পর্যন্ত তা রুখে দেয় তৎকালীন চাঁদপুরের ডিসি অঞ্জনা খান মজলিশ। একপর্যায়ে চাঁদপুর ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রাক্কলন প্রক্রিয়া চুড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে যায়।

ভূমির প্রকৃত মালিকরা বলেন, সেলিম চেয়ারম্যান দীপু মনির প্রভাব খাটিয়ে জমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করেন। কিন্তু এখন তো আর বিশ্ববিদ্যালয় হলো না। আমরা এখন জমি ফেরত চাই।

ভুক্তভোগী জমির মালিকরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় করার নাম করে আমার কাছ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক নিয়ে গেছে সেলিম খান। আমি দিতে রাজি হইনি। তার লোকজন দিয়ে আমাকে ধরে এনে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জমি লিখে নেয়। দাম হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা, দিয়েছে ১২ লাখ টাকা। আমি আমার জমি ফেরত চাই।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তিন বিভাগের দুই ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮০ জন। চাঁদপুর শহরের ওয়াপদাগেট খলিশাডুলি এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, দুর্নীতির কারণে সরকার ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যবস্থাসহ জমি বরাদ্দ দেওয়া হোক। সব জায়গায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছে অথচ ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতির কারণে আমরা এখনো অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আছি। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আহ্বান জানাব যাতে জেলা শহরের মধ্যে খুব ভালো একটি স্থানে আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক  বলেন, আমাদের নিজস্ব ভবন না থাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এতে নানা সমস্যা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আবাসিক হল, খেলাধুলার মাঠ নেই। নিজস্ব আবাসিক হল না থাকায় মেয়েদের বেশি সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটিতে দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস করা হোক।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, আমি চাঁদপুরে যোগদানের আগেই অধিগ্রহণ প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আগে যে স্থানে ভূমি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। ওই জায়গায় আর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলে আমরা নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কাজ করব।

প্রসঙ্গত, অনিয়ম ও অভিযোগে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বরে ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করা হয়। তবে সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনির চাপে তা এতদিন গোপন ছিল।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.