ছবিঃ সংগৃহীত।
আজ বাংলা
ক্যালেন্ডারের তারিখ অনুযায়ী, ১লা অগ্রহায়ণ। প্রতি বছর হেমন্ত ঋতুর এই সময়টায় আমাদের
গ্রাম বাংলায় নতুন ধান কাটা আর সেই সাথে প্রথম ধানের অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে চলে
নানা উৎসব, নানা আয়োজন। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির জীবনে অগ্রহায়ণ কৃষকের নতুন বার্তা
নিয়ে আগমন ঘটে। নবান্ন হচ্ছে হেমন্তের প্রাণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
চারুকলা অনুষদ প্রতি বছর বেশ ঘটা করেই পালন করে নবান্ন উৎসব। ‘এসো মিলি সবে নবান্নের
উৎসবে’ এই প্রতিপাদ্যে এ বছরও চারুকলায় নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা
হয়েছে। ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে ছুটে আয়...’ অগ্রহায়ণ আসলেই এমন আহ্বানে যেন
পুরো গ্রাম মেতে ওঠে। কৃষকের মুখে হাসি ফোটে, জীবনে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়।
আজ (১৬ নভেম্বর)
চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদের উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো
এবারও সকাল সাড়ে ৭টায় বাঁশি বাজার মধ্য দিয়ে আয়োজন শুরু হয় এই উৎসবের। এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে ২৫
বছর পূর্তি হলো নবান্ন উৎসবের। এবারের আয়োজন উদযাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি হাসিনা মমতাজকে
উৎসর্গ করা হয় এবং তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান চলবে রাত পর্যন্ত।
পিঠাপুলি, বাহারি পোশাক, রঙিন সজ্জায় বাঁশির মায়াবী ধ্বনি, নাচ, গান আর আবৃত্তিতে
অগ্রহায়ণের প্রথম সকালে চারুকলার বকুলতলা মুখর হয়ে উঠেছে।
সকাল সাড়ে
৭টায় শিল্পী হাসান আলীর বাঁশির সুরের মূর্ছনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় এবারের আয়োজন। এ উৎসবে
বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, আবৃত্তি শিল্পীগণ একক ও দলীয় সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি
পরিবেশন করেন। একইসঙ্গে ছিলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবেশনাও। বিকালে আয়োজনের দ্বিতীয়
পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। দিনভর নানা সংগীত, নৃত্য আর আবৃত্তির একের পর এক আয়োজনে উৎসবমুখর
ছিলো চারুকলা প্রাঙ্গণ।
উৎসবের
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধানবিজ্ঞানী ড. জীবন কৃষ্ণ
বিশ্বাস। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জনাব নাঈম হাসান সুজা এবং সভাপতিত্ব করেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ ও আবৃত্তিশিল্পী ও
জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি কাজী
মদিনা। পর্ষদের সভাপতি লায়লা হাসান চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহ-সভাপতি মানজার
চৌধুরী সুইট এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি সঙ্গীতা
ইমাম, আফরোজা হাসান শিল্পী এবং সাবরিনা হাবিব নিপু।
ধানবিজ্ঞানী
ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে এসে
মনে হয়েছে সত্যি সত্যিই ধানের ক্ষেত থেকে উঠে আসা মানুষ। আমাদের ধানের ফলন বেড়েছে। যারা ধানের ক্ষেতে কাজ করে তারাই আসল কৃষি বিজ্ঞানী। আমাদের সমৃদ্ধির জন্য তারা সবচেয়ে বেশি কাজ করে। কিন্তু পদ্ধতিগত কারণে তাদেরকেই আমরা সুস্থ অবস্থায় দেখতে পাই না, তাদের অভাব যায় না। আমাদের এই অবস্থা থেকে
বের হয়ে আসতে হবে। আমি অনেক আগে থেকই বলে আসছি, যে ধানের যে
জাত সেই নামেই বাজারে চাল থাকতে হবে। কিন্তু বাজারে নানা নামে চাল বিক্রি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। তাই আপনাদের দোকানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে, যে আমি অমুক
জাতের চাল চাই।
উদযাপন
পর্ষদের সভাপতি লায়লা হাসান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে শেকড়ের সন্ধান, আমাদের উৎস মূলের সন্ধান-আত্মিক সম্পর্কের সন্ধান দেবার জন্য আমাদের এই প্রয়াস। সেই
সঙ্গে আমাদের কৃষক সম্প্রদায় যারা রাতদিন অপরিসীম পরিশ্রম করে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের অন্ন যোগান দেন, তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদানও
আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। বাঙ্গালির সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য বিবেচনা করে ১ অগ্রহায়ণকে ‘জাতীয়
নবান্ন উৎসব দিবস’ হিসেবে সমাদৃত হোক, স্বীকৃত হোক এটি আমাদের একান্ত অভিলাষ। নবান্ন উৎসব উদযাপনের ২৫ বছর পূর্তিতে
আয়োজনটি আমাদের সহসভাপতি বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত হাসিনা মমতাজ এর নামে উৎসর্গ
করা হলো।
অগ্রহায়ণের
অনুষ্ঠানকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলবে প্রথম ভাগের আনুষ্ঠানিকতা।
দুপুর ২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় ভাগের পরিবেশনা। বিভিন্ন সংগঠন তাদের
পরিবেশনা উপস্থাপন করছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh