পুলিশ-বিজিবি বাঁশি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া শুরু করে। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সনাতন সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ।
আজ (২৬ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আদালত ভবনের সামনে এ বিক্ষোভে তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে আইনজীবীরাও। আদালতের নিরাপত্তায় সকাল থেকে পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন করা হলেও তাদের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, “হাকিম আদালতের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে আমরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মিস মামলা করেছি।
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসা চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে সোমবার ঢাকা বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা এরপর রাত থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। তাকে প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে আদালত তোলার সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন সেখানে। জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর কারাগারে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ যাতে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করতে পারেন, সে বিষয়ে আদেশ চান তার আইনজীবীরা। আদালত এ বিষয়ে কারাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এসময় এজলাসের ভেতরে আইনজীবীরা এবং বাইরে সনাতনীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়ে তার মুক্তির দাবি করতে থাকেন। সোয়া ১২টার দিকে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে পুলিশ-বিজিবি-এপিবিএন সদস্যদের পাহারায় আদালত ভবন থেকে নামিয়ে নিচে রাখা প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এসময় সনাতন সম্প্রদায়ের বিক্ষুব্ধ লোকজন জড়ো হয় প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে।
তারা জয় শ্রী রাম স্লোগানের পাশাপাশি 'চেয়ে ছিলাম অধিকার, পেয়ে গেলাম কারাগার', ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপ দাদার, ‘এক দুই তিন চার, সব শালারা বাটপার’ স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় অনেকে শঙ্খ ধ্বনি দেয়।
এসময় প্রিজন ভ্যান থেকে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ। তিনি বলেন, “আমরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করেছি। আমরা রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে নই। ৫ অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে যে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের আশা দেখা দিয়েছে- আমরা সনাতনীরা তার অংশ। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ৮ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালাবেন। আবেগকে শক্তিতে পরিণত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দেবেন- এটা আশা করছি। রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয় বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট হয়- এমন কিছু করব না।”
এদিকে বেলা দেড়টার দিকে বিজিবি-পুলিশ বাঁশি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে 'ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া শুরু করে। চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে অনুসারীদের অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের নিচের সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে আছে। চিন্ময়কে যে প্রিজন ভ্যানে রাখা হয়েছে সেটি ঘিরে কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে সাধু, সন্ন্যাসী, নারী ও শিশু রয়েছে। প্রিজন ভ্যান ও বিক্ষোভকারীদের ঘিরে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি।