× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও ঘটনাবহুল ২০২৪ সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

রিং বাণিজ্যে দুই রোগীর মৃত্যু; অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা ডাক্তারের

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো।

০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৪ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত

‘চিকিৎসক হয়ে হার্টের রিং (স্টেন্ট) বিক্রি করেন, হার্টের রক্তনালীতে একটি রিং পরিয়ে তিনটির টাকা নেন, রক্তনালীতে ব্লক না থাকলেও ব্লক আছে বলে অতংকিত করে তোলেন’ এমন সব অভিযোগের তদন্ত না হতেই এবার ‘ভুল চিকিৎসায়’ দুজন রোগীর মৃত্যুর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাপসাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে।

হাসপাতালের পরিচালক বরাবর এবার লিখিত অভিযোগ করেন একই হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহিন শাহ্।

ডা. শাহিন শাহ্’র আপন খালু রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আফজাল হোসেন (৬৫) রিং পরানোর পর মারা যাওয়ায় ডা. মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

অন্যদিকে, ডা. মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে হার্টের রক্তনালীতে রিং পরিয়ে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় স্বামী লাল মিয়া (৫০) মারা যাওয়ার আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন গাইবান্ধা সাঘাটা উপজেলার কচুয়া গুজাপাড়া গ্রামের মোসা. ফরিদা বেগম।
অভিযুক্ত ডাঃ মাহাবুবুর রহমান
দুইটি অভিযোগের কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এ নিয়ে ডাঃ মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে রিং বাণিজ্য ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর চারটি লিখিত অভিযোগ করলেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের কপি দুনীতি দমন কমিশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসি, রমেক হাসপাতাল, রংপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ডাকযোগে ও সরাসরি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে গত ৭ ডিসেম্বর শনিবার অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. হরিপদ সরকারকে সভাপতি ও হাসপাতালের উপপরিচালক আ.ম. আখতারুজ্জামানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এতে সদস্য রয়েছে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইদুজ্জামান। দশ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন করতে বলা হয়েছে।

গত ৮ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটির সভাপতি ও বিভাগীয় প্রধান ডা. হরিপদ সরকার স্বাক্ষরিত (স্মারক নং-২০২৪/১২/০৮/০১) পত্রে ‘ক্যাথল্যাবে অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সংক্রান্ত’ বিষয়ে বক্তব্য ও ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে ডা. মাহবুবুর রহমানকে লিখিত ভাবে তলব করেছেন।

অন্যদিকে হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক ও নার্সরা ডা. মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে রিং ও অন্যান্য সরঞ্জমাদি বিক্রির অভিযোগ দিলেও কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. হরিপদ সরকার কোন ব্যবস্থা নেননি। এ সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।

এদিকে ডা. শাহিন শাহ্ লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘ডা. মাহাবুবুর রহমান আমার পূর্ব পরিচিত, ঘনিষ্ট ও সহকর্মী হওয়ার বিশ্বাসের জায়গা থেকে তার অধীনে আমার খালুকে ভর্তি করি। ডা. মাহবুবুর রহমান আমার খালুর এনজিওগ্রাম করেন ০৭/১১/২০২৩ তারিখ সকালে। রিং পরানোর সময় ‘আর্টারি পারফোরেশন’ হয়ে গেলে অর্থাৎ হার্টের রক্তনালীতে ফুটা হয়ে গেলে রক্তক্ষরণে আমার খালু ওইদিনই (০৭/১১/২০২৩ তারিখ) কয়েক ঘন্টা পর মারা যান। ‘আর্টারি পারফোরেশন’ হয়ে গেলেও ডা. মাহাবুব আমাকে বা মেডিকেলে উপস্থিত আমার খালাকে কিছুই জানাননি বরং তিনি রিং লাগানোর কার্যক্রম বন্ধ করে রেজিস্টার খাতায়‘ক্যানসেল’ লিখেন এবং ভুল ও অবহেলায় আমার খালুর মৃত্যুর দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। এনজিওগ্রাম ও রিং পরানোয় ভুল ও অবহেলা হওয়ায় আমার খালু মারা যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবু জাহেদ বসুনিয়া স্যারের নিকট জানতে পারি যে উক্ত রক্তনালীতে রিং না পরালেও চলতো। ডা. মাহাবুবুর রহমানের প্রভাবের কারণে এতদিন অভিযোগ করতে পারেননি। আমি জেনেছি যে ডা. মাহাবুবুর রহমান রিং বিক্রির উদ্দেশ্য বিভিন্ন অনৈতিক পন্হা অবলম্বণ করেন। এমনকি, তিনি অননুমোদিত ভুূয়া ডিগ্রি এমডি (র্কাডিওলজি) ব্যবহারও করেন।’

এদিকে মোসা. ফরিদা বেগম তার লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘এ বছরের ২৭ নভেম্বর ডা. মাহাবুবুর রহমান তার স্বামী লাল মিয়ার এনজিওগ্রাম করেন এবং অপারেশন করে হার্টের রক্তনালীতে রিং পরান। প্রেসার কম থাকার পরও রিং পরানো হয়। এর চারদিন পর ডা. মাহাবুবুর রহমানের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ ডিসেম্বর আমার স্বামী মারা যান।’

দু’টি গরু বি‌ক্রি ক‌রে ও মানুষের নিকট টাকা চেয়ে চিকিৎসার টাকা সংগ্রহ করেছিলেন উল্লেখ করে ফরিদা বলেন,‘আমার স্বামীর রিং লাগানোর মতো অবস্থা ছিল না এবং ডা. মাহাবুবুর রহমান ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে আমার স্বামী মারা গেছেন।’
তিনি ডা. মাহাবুবুর রহমানের চিকিৎসা পেশা থেকে বরখাস্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।

এর আগে ডা. মাহাবুবুর রহমানের রিং বাণিজ্যে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে অভিযোগ করেন দুইজন ভুক্তভোগী মোহা. মশিউর রহমান ও আতোয়ার রহমান।

আতোয়ার রহমান অভিযোগ করেন, ডা. মাহাবুবুর রহমান তিনটি রিং লাগোনোর কথা বলে তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা নিয়েছেন কিন্তু রিং লাগিয়েছেন একটি। বিস্ময়কর ব্যপার হচ্ছে অভিযোগ হওয়ার নিজেকে বাঁচাতে মাহাবুবুর রহমান হাসপাতালের কাডিওলজি বিভাগের রেজিস্টার খাতায় একটি রিং এর স্টিকারের পাশে জালিয়াতি করে আরেকটি রিং পরানোর স্টিকার বসিয়েছেন যাতে মনে হয় তিনি দুটি রিং পরিয়েছেন আতোয়ারকে। সেই রেজিস্টার খাতার বর্তমান ও আগের স্টিকার লাগানো ছবি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ভুক্তভোগীর ছেলে মোহা. মশিউর রহমান তার অভিযোগপত্রে বলেন, পেটে ব্যাথা হলে ১৮ সেপ্টেম্বর ডা. মাহাবুবুর রহমান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করেন এবং বলেন যে তার মায়ের হার্টের রক্তনালীতে ৭৫ শতাংশ ব্লক আছে তা এক লক্ষ আশি হাজার টাকা দিয়ে রিং (স্টেন্ট) পরাতে হবে। কিন্তু তিনি যখন এনজিওগ্রামে সিডি অন্য দুজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেখালে বলে যে হাটের রক্তনালীতে কোন ব্লক নেই।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা রোগীর হার্টে রিং স্থাপনের পর তাকে রিপোর্ট কপি এবং সিডি দেওয়া হয়। সেখানে বিস্তারিত তথ্য থাকে। এর পরও যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে এটা দুঃখজনক।

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানান, আগে দুজন ভুক্তভোগীর দেওয়া দুটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ওই চিকিৎসক দোষী কিনা এবং তদন্ত কমিটির মতামত দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নতুন করে আরও একটি অভিযোগ এসেছে, সেটি ডা. শাহীন শাহ্ নামে এক চিকিৎসক দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.