ছবিঃ সংগৃহীত।
আজ (১৪ জানুয়ারি) আর বাংলা ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখটা হল, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। পৌষের সমাপনী দিনে উদযাপিত হচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী উৎসব পৌষ সংক্রান্তি। একই দিনে পুরান ঢাকা মাতবে সাকরাইন উৎসবে। অনেক আগে থেকেই পুরান ঢাকায় সাড়ম্বরে পালিত হয় দিনটি। মুঘল আমল থেকে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। উৎসবে অংশ নেন সব সবাই। পুরান ঢাকা এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে বাড়বে ঘুড়ির সংখ্যা, বাড়বে উৎসবের রঙ। সব মিলিয়ে রঙিন ঘুড়িতে ছেয়ে যাবে ঢাকার আকাশ। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানোর পরে সন্ধ্যায় পটকা ফুটিয়ে ফানুস উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি করে।
ঢাকাইয়া
ভাষায় 'সাকরাইন' নামেই এটি অধিক পরিচিত। পৌষ সংক্রান্তি, সংক্রান্তি বা সাকরাইন যেভাবেই
বলা হোক এ উৎসব নিয়ে
পুরান ঢাকাবাসীর থাকে ব্যাপক আগ্রহ। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ঘুড়ি, নাটাই, আতশবাজি, ফানুস, মাইক্রোফোন আলাদাভাবে এলাকার ছেলেরা জড়ো করতে থাকে।
পুরান
ঢাকার শাঁখারিবাজার, তাঁতিবাজার, কলতাবাজার, শিংটোলা, কাগজীটোলা, সূত্রাপুর, লক্ষীবাজার, বাংলাবাজার, ফরাশগঞ্জ, বানিয়ানগর, আইজি গেট, আরসিন গেট, গেন্ডারিয়া প্রভৃতি এলাকা সাকরাইনের দিনে যেন নতুন প্রাণ পায়।
ঐতিহ্যের
আলোয় পৌষের শেষদিনকে রঙিন করতে মাতোয়ারা পুরান ঢাকাবাসী। তাই উৎসব ঘিরে পুরান ঢাকার
অলিগলিতে চলছে ঘুড়ি বেচাকেনার উৎসব। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধরা কিনছেন ঘুড়ি, নাটাই, সুতা।
চলছে সুতায় মাঞ্জা দেওয়ার কাজ। পুরান ঢাকায় চলছে ঘুড়ি বেচাকেনার ধুম।
গতকাল
(১৩ জানুয়ারি) পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দোকানে দোকানে হরেকরকমের ঘুড়ি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রঙ-বেরঙের ঘুড়ি
আর নাটাই-সুতা সারি সারি করে সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। বাজারে বিভিন্ন নামের ঘুড়ি পাওয়া যাচ্ছে।
সেগুলোর
মধ্যে অন্যতম- চোখদার, চশমাদার, কাউটাদার, লাভবার্ড, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি, চক্ষুদার, ঈগল, সাদাঘুড়ি, চার বোয়া, দুই বোয়া, টেক্কা, লাভঘুড়ি, তিন টেক্কা, মালাদার, দাবা ঘুড়ি, বাদুড়, চিল, অ্যাংগ্রি বার্ডস হরেক রঙের ঘুড়ি।
এসব
নাটাই মিলবে ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। সেসব সুতার মধ্যে রক সুতা, ডাবল
ড্রাগন, কিংকোবরা, ক্লাক ডেবিল, ব্লাক গান, ডাবল গান, সম্রাট, ডাবল ব্লেট, মানজা, বর্ধমান, লালগান ও টাইগার অন্যতম।
সময়ের
সাথে সর্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবে রূপ নেওয়া এ উৎসব উদযাপনের
ধরনে গত ক'বছরে
এসেছে অনেক পরিবর্তন। এক সময় ঘুড়ি,
নাটাই আর মাঞ্জাতে সীমাবদ্ধ
থাকলেও সাকরাইনের পরিসর তাই এখন ব্যাপক। দিনের প্রথম পর্বে চলে ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা; গোত্তা খাওয়া ঘুড়ি এবং 'ভোকাট্টা' রবের সঙ্গে সাউন্ড সিস্টেমের তালে তালে গানবাজনার মাধ্যমে আনন্দ-উল্লাস চলতে থাকে শীতের মিষ্টি বিকেল জুড়ে।
সন্ধ্যা
নামতেই শুরু হয়ে যায় চোখ ধাঁধানো আতশবাজির প্রদর্শনী। লেজার শো আর 'ডিস্কো
লাইট' এর পাশাপাশি কেউ
কেউ কেরোসিন মুখে মশালে ফুঁ দিয়ে অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে; সন্ধ্যার আকাশে ঘুড়ির জায়গা নেয় রঙিন ফানুস। আলোর ঝলকানিতে ঢেকে যায় পুরান ঢাকার সম্পূর্ণ আকাশ।
সাকরাইন উৎসব
ঘিরে শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগ ও এর
আশেপাশের এলাকাগুলোতে বাসার ছাদে সাউন্ড-সিস্টেম, আলোকসজ্জা ও লাইটিং করে সাজানো হয়েছে।
উৎসবটি 'মকর
সংক্রান্তি' নামেও পরিচিত।
'মকরসংক্রান্তি'
শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী, ‘সংক্রান্তি’ একটি সংস্কৃত শব্দ। এর দ্বারা সূর্যের
এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। ১২টি রাশি অনুযায়ী এরকম সর্বমোট ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে।
বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় এই দিবস বা
ক্ষণকে ঘিরে উদযাপিত হয় উৎসব। নেপালে এই দিবসটি মাঘি
নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পি মা লাও,
মিয়ানমারে থিং ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান নামে উদযাপিত হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh