ছবিঃ সংগৃহীত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু করেছে।
আজ (১০ ফেব্রুয়ারি)
সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ২১টি জুলাই শহীদ পরিবার
ও সাতজন আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এসময় উপস্থিত
ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম,
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর
রহমান।
এদিন তিন
শহীদ পরিবারের সদস্য এবং তিনজন আহত ব্যক্তি বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে জুলাই-আগস্টে
গণঅভ্যুত্থানে চালানো হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রাপ্তি, আর্থিক
সহযোগিতা ও পুনরবাসন্সহ বিভিন্ন বিষয়বস্তু উঠে আসে। কেউ কেউ এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রধান উপদেষ্টা
বলেন, সবসময় ভাবি যাদের কারণে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার
সাহস করছি তাদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না।
ড. ইউনূস
আরও বলেন, আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে
স্মরণ করতে পারে না সে জাতি জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না। জাতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা।
প্রধান উপদেষ্টা
শহীদ পরিবার ও আহতের উদ্দেশে বলেন, আজ থেকে আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন।
এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে গ্রহণ করতে
হবে।
সকল গুম-খুনের
সুবিচার হবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়।
বিচারের মূল জিনিসটা হলো এটা সুবিচার হতে হবে… অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে
দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে
তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়। আমরা অবিচারে নামব না। আমরা যারা অপরাধী
তাদের পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করব। যারা অপরাধী নয়, পুলিশের হাতে দেওয়ার মতো
নয় তাদের মানুষ করব।
একটি সুন্দর
দেশ গড়ার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে
যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো এটা সুবিচার হতে হবে… অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে
দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে
তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়। আমরা অবিচারে নামব না। আমরা যারা অপরাধী
তাদের পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করব। যারা অপরাধী নয়, পুলিশের হাতে দেওয়ার মতো
নয় তাদের মানুষ করব।
এসময়
তিনি জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাইয়ের আহতদের
আহ্বান জানান, দেশে কোনো সহিংসতা ও হানাহানি যেন
না হয় সেদিকে সজাগ
দৃষ্টি রাখবেন।
বৈঠকে
আহত ও শহীদ পরিবারের
সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের
জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
সরকারের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদরা ‘জুলাই শহীদ' নামে অভিহিত হবেন এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা' নামে অভিহিত হবেন এবং পরিচয়পত্র পাবেন।
প্রতিটি
শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা
আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয়
সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা
এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাইয়ে
জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা
সহায়তা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি
শহীদ পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা
করে ভাতা প্রদান করা হবে। শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা সরকারি
চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
জুলাই
যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধাদি পাবেন।
গুরুতর
আহতদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী, এককালীন
৫ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ
(ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা
প্রদান করা হবে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ
(ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা
প্রদান করা হবে। এর পাশাপাশি গুরুতর
আহত প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা
ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন ও মেডিকেল বোর্ডের
সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবেন। তারা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা
পাবেন।
'ক্যাটাগরি
বি' অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা
প্রদান করা হবে; এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ
(ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা
প্রদান করা হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ
(ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা
প্রদান করা হবে। এর পাশাপাশি মাসিক
১৫ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হবে; কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে
সরকারি/আধা সরকারি কর্মসংস্থান প্রাপ্য হবেন।
জুলাই
যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। তারা পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধাদি পাবেন।
এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এ ছাড়া আহতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh