ছবিঃ সংগৃহীত।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক 'নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক' হওয়া উচিত নয়, এমন মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল (১৭ ফেব্রুয়ারি) তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টি তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, বিশেষ করে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
ওমানের মাসকাটে অনুষ্ঠিত অষ্টম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের (ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স) ফাঁকে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাক্ষাৎ হয়। সেখানে বাংলাদেশের সম্পর্কের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা হয় এবং একে অপরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধানে গুরুত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে, গতকাল (১৭ ফেব্রুয়ারি) দ্য হিন্দুতে দেয়া সাক্ষাৎকারে তৌহিদ হোসেন বলেন, "ভারত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এক ধরনের সম্পর্কের প্রতি অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎ তা ভেঙে পড়ে। নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে, ফলে কিছু অস্বস্তি ও বৈরী মনোভাব সৃষ্টি হয়। তবে ছয় মাসের মধ্যে এই পরিস্থিতি অবশ্যই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত।"
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এবং ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, বিশেষত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। কিছু সময়ের জন্য বাণিজ্যে মন্দা দেখা দিলেও তা পুনরায় চাঙ্গা হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, দুই দেশের মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক আগ্রহ রয়েছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভারতের উদ্বেগের প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, "বাংলাদেশে হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমদের মতোই সমান নাগরিক। তারা সম-অধিকার এবং সুরক্ষার অধিকারী। এটি সরকারের কাজ এবং তারা এটি করে যাচ্ছে।" তিনি আরও বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর কিছু মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে এই বিষয়ে অযথা উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তৌহিদ হোসেন বলেন, "শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতকে আমরা অনুরোধ করেছি।" তিনি আরও বলেন, "ভারত সরকার যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেয়, অন্তত তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত যাতে তিনি উত্তেজনা সৃষ্টি না করেন।"
বিএসএফের গুলি চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, "২০২৪ সালে সীমান্তে ২৪ জনকে গুলি করা হয়েছে, যার অর্ধেক বিগত সরকারের আমলে। পৃথিবীর আর কোথাও এমন কিছু ঘটেনি। যদি অপরাধ ঘটে, গ্রেপ্তার করতে হবে, আদালতে নিয়ে যেতে হবে। তবে হত্যা করা উচিত নয়।"
আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, "আমরা দুটি পর্যায়ে আলোচনা করব— একে চুক্তি স্বাক্ষরের আগে, আর একে চুক্তি স্বাক্ষরের পরে। যদি আমরা মনে করি, কিছু ভুল হয়েছে, তবে আমরা তা আবার আলোচনা করতে পারি।" তিনি আরও বলেন, "বিশ্ববাজারে সম্ভবত সর্বোত্তম দামে কয়লা কেনার চেষ্টা করা উচিত ছিল, যা হয়নি।"
বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্র চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, "সমুদ্রে একে অপরের অঞ্চলে প্রবেশ করাটা সহজ নয়, তবে দুই দেশের জেলেরা একে অপরের সীমানায় চলে আসে। আমরা তাদের মুক্তির জন্য নির্দিষ্ট সময় পরে আলোচনা করি, এবং যদি খারাপ আচরণ পাওয়া যায়, তবে অবশ্যই আমরা তা আমলে নেব।"
এপ্রিলের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদি ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তিনি জানান, "তাদের সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা রয়েছে। যখন ‘শীর্ষ কর্তারা’ একসঙ্গে বসেন, তারা সাধারণত একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করেন, যেমন সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ঘটে থাকে।"
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে বলেন, "সম্পর্ক শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সরকারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। বিএনপি সরকারেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল, তাই যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমাদের সম্পর্কের ওপর তা প্রভাব ফেলবে না।" তিনি বিশ্বাস করেন, দুই দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ এবং শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh