অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মন্তব্য করেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত হয়ে সবাইকে হরেদরে শাহবাগী বলা বন্ধ করতে হবে। গতকাল (১২ মার্চ) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ বিষয়টি তুলে ধরেন।

২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনের প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, শাহবাগে যারা গিয়েছিল, তাদের একটি বড় অংশ ‘চেতনা’র অন্ধতায় পড়েছিল। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল, এবং এ আন্দোলনটির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের আবেগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীরা মবোক্রেসি কায়েম করেছিল, যার ফলস্বরূপ দীর্ঘ এক দশক ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে বিরোধীদলীয় কর্মীদের গুম, খুন, ধর্ষণ ও নিপীড়ন করা হয়েছিল।

তবে, মাহফুজ আলম উল্লেখ করেন, শাহবাগে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-তরুণ তাদের ভুল বুঝতে পেরে মুজিববাদী বয়ানের বাইরে গিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন এবং তাঁদের অনেকেই আহত বা নিহত হয়েছেন। তাদের তিনি সহযোদ্ধা ও কমরেড হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন যে তারা ইতোমধ্যে নিজেদের রাজনৈতিক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ও কাফফারা আদায় করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা জামায়াত বা শিবিরের কর্মীদের 'রাজাকার' বা 'স্বাধীনতাবিরোধী' হিসেবে আক্রমণ করা চলবে না। পাশাপাশি শাহবাগের ইসলামফোবিয়া বিরুদ্ধেও তাদের অবস্থান রয়েছে। এই ইসলামফোবিয়ার শিকার তিনি নিজেও হয়েছেন। তিনি শাহবাগের সাংস্কৃতিক বন্দোবস্তকে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের 'ঊন-মানুষে' পরিণত করার উল্লেখ করেন।

তথ্য উপদেষ্টা আরও জানান, পুরানো ‘শাহবাগী' -দের, যারা এখনও শাহবাগের মুজিববাদ, ভারতপন্থা এবং শেখ পরিবারের প্রতি আনুগত্যকেই নিজেদের আদর্শ মনে করেন, তাদের প্রতি কোনো ছাড় দেয়া উচিত হবে না। এই গোষ্ঠীই গণহত্যার উস্কানি দিয়েছিল এবং ২০১৩ সালের জুলাই গণহত্যার সময় চুপ ছিল বা বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। বিদেশে যারা এখনও ফ্যাসিবাদের পক্ষে সাফাই গাইছে, তাদের একটি বড় অংশও শাহবাগী, যারা জনগণের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু এবং গণ-অভ্যুত্থানের শত্রু।

মাহফুজ আলম বলেন, অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে শাহবাগে বেড়ে ওঠা মবোক্রেসি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে হবে এবং গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সহনাগরিকদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ সংলাপ ও সংহতির দিকে সবাইকে এগুতে হবে। তিনি বলেন, শাহবাগের ছাত্র-তরুণ যারা মুজিববাদের এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ‘শাহবাগী'  ট্যাগ ব্যবহার করে বিভেদ সৃষ্টি করা বা উস্কানি দেয়া কেবল সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত হয়ে হরেদরে সবাইকে শাহবাগী বলা বন্ধ করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই থাকবেই। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদেরকে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ও মৈত্রী বাড়াতে হবে, শত্রু কমাতে হবে এবং চিহ্নিত শত্রুর দীর্ঘমেয়াদে পরাজয় নিশ্চিত করতে হবে।