বাংলাদেশসহ
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৪-১২ ঘণ্টা
এবং পরবর্তী ৩ থেকে ৭
দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ৫.৫-৬.৫ মাত্রার মাঝারি
থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে। বিশেষভাবে ভারত, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান এই ভূমিকম্পের প্রভাব
থেকে বাদ যাবে না।
বঙ্গোপসাগর
অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ভূতাত্ত্বিকভাবে এটি 'সিয়াম প্লেট' ও 'ইউরেশিয়ান প্লেট'
এর সংযোগস্থল এবং এখানকার বিভিন্ন শিলাস্তরের চাপের কারণে এই ধরনের ভূমিকম্পের
আশঙ্কা বেশিরভাগ। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীরে থাকা বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের উপকূলীয়
অঞ্চল ভূমিকম্পের সবচেয়ে বড় শিকার হতে
পারে।
বিশেষজ্ঞরা
জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরের গভীর জলাশয়ে অন্তর্গত ভূ-অবস্থার কারণে
যখন শক্তিশালী শক ওয়েভ উৎপন্ন
হয়, তখন সেই তরঙ্গ সাগরের উপর দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। এছাড়া, মহাসাগরের তলদেশে ছোট ছোট নথির মধ্যে ভূমিকম্পের তরঙ্গগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের
জনসংখ্যা এবং অবকাঠামোতে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।
বাংলাদেশের
উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী এবং খুলনা জেলার বিভিন্ন স্থান ভূমিকম্পের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে পারে। এসব অঞ্চলে নদীঘাট, সেতু, বাঁধ এবং স্থাপনা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং মূল সড়কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে উদ্ধারকাজ পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশে
উপকূলীয় এলাকায় বাঁধগুলো অনেকটা এক ধরনের রক্ষাকারী
হিসেবে কাজ করে। ভূমিকম্পের ফলে এসব বাঁধ ভেঙে গেলে সামুদ্রিক পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে, যা ঘরবাড়ি, কৃষি
জমি, এবং মাছ ধরার কাজের ক্ষতি করবে।
ভূমিকম্পের
প্রভাব হতে পারে মানবিক বিপর্যয়ের। নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি থাকা জরুরি। তাছাড়া, ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে সুনামির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও দেখা দিতে পারে, যা আরও মারাত্মক
পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
ভূমিকম্পবিজ্ঞানীরা
বলছেন, এমন এক শক্তিশালী ভূমিকম্পের
কারণে কাচ, সিসি প্যানেল ও পুরনো অবকাঠামোতে
বিপুল ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ভবনগুলোতে উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জন্য ঝুঁকি বেশি। তাই প্রত্যেক নাগরিককে ভূমিকম্পের পূর্বে বা পরবর্তী সময়ে
নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে।