প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মুনাফার চেয়ে মানুষের কল্যাণ এবং পৃথিবীর সুরক্ষা অগ্রাধিকার দিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
আজ (২৭ মার্চ) চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এই বিষয়টি তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের অবশ্যই এমন একটি অর্থনৈতিক মডেলের দিকে এগোতে হবে, যা মুনাফার চেয়ে মানুষ ও পৃথিবীকে অগ্রাধিকার দেয়।” তিনি আরও বলেন, মানব সভ্যতা বর্তমান অর্থনৈতিক মূল্যবোধের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, কারণ আধিপত্যশীল অর্থনৈতিক মডেল সীমাহীন ভোগের ওপর নির্ভরশীল, যা পরিবেশগত অবক্ষয় এবং অতিরিক্ত সম্পদ উত্তোলনকে ন্যায্যতা দেয়।
তিনি সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু সংকট মানবতার জন্য একটি অস্তিত্বগত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। জলবায়ু দুর্যোগের কারণে ইতোমধ্যে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলার সমান।
বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে, এমনটিও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, "আমাদের নতুন ধরনের বেসরকারি, সহজলভ্য এবং অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিত করবে।"
অধ্যাপক ইউনূস সম্মেলনে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তির সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। কোভিড-১৯ মহামারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈষম্যগুলো সামনে আনার পাশাপাশি, বৈশ্বিক মহামারি চুক্তির আলোচনায় এশিয়ার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রযুক্তিগত অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, তথ্য-চালিত প্রযুক্তি, রোবটিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে একটি নতুন দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে, এশিয়ার তুলনায় কম সক্ষমতা ও সম্পদের কারণে ডিজিটাল বৈষম্য আরও বাড়তে পারে। তিনি তথ্যের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার বিষয়টি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, “যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তবে তা অস্তিত্বগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”
অধ্যাপক ইউনূস শেষ করেন, এশিয়াকে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।