প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের ইতিহাসে পুনর্জন্ম প্রত্যক্ষ করেছে। আজ (৪ এপ্রিল) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালে নৃশংস সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস ধরে চলা গণহত্যায় লাখ লাখ সাধারণ নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক-যুবতী সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছিলেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং মুক্ত সমাজ গঠন করা, যেখানে প্রতিটি সাধারণ মানুষ তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। তবে দুঃখজনকভাবে, গত পনেরো বছরে বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, তাদের স্থান এবং অধিকার হারিয়েছে। তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর গভীর ক্ষয় এবং নাগরিক অধিকার পদদলিত হতে দেখেছে। প্রায় ২ হাজার নিরীহ মানুষের জীবন হারিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই যুবক, এবং এর মধ্যে ১১৮ জন শিশু ছিল। ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ তার ইতিহাসে এক পুনর্জন্ম প্রত্যক্ষ করেছে।”
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে বিদ্রোহের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতারা তাকে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি জনগণের স্বার্থে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছি।”
বিমসটেক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আনন্দিত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি তার প্রথম সরাসরি আলাপচারিতা বিমসটেক অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে। ১৯৯৭ সালে থাইল্যান্ডে শুরু হওয়া বিমসটেক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি থাইল্যান্ড সরকারের প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “আমাদের আগমনের পর থেকে আমাকে এবং আমার প্রতিনিধিদলকে যে উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং আতিথেয়তা প্রদান করা হয়েছে, তার জন্য আমি গভীর কৃতজ্ঞ।” বিমসটেক সচিবালয়ের মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইন্দ্র মণি পান্ডের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়া, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানির ঘটনায় থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারের সরকার এবং জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা এবং সহানুভূতি জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশ থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারের ভাইবোনদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। আমরা প্রিয়জনদের হারানো পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আমি নিশ্চিত যে থাই সরকারের দৃঢ় নেতৃত্ব এবং প্রচেষ্টার ফলে তারা এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনবে।”