অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতিকে' প্রো-বাংলাদেশপন্থি' হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে ওঠা সমালোচনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
আজাদ মজুমদার লেখেন,বিশ্ব ইতিহাসে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে পূর্বের শত্রুরা পরে মিত্রে পরিণত হয়েছে। যেমন—ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুদ্ধ করেছে, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তারা একসঙ্গে লড়েছে। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, কিন্তু পরে দুই দেশ ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়েছে।
-6802714798405.jpg)
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কি পাকিস্তানপন্থি হয়ে যাচ্ছে?—এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের। তবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সবসময়ই এমন কিছু মানুষ থাকবেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পরিচয়ে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন না।
উপ-প্রেস সচিব জানান, বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি অতীতের মতো নয়। এখন থেকে পররাষ্ট্রনীতি হবে একান্তই বাংলাদেশপন্থি—বাংলাদেশের স্বার্থ ও জাতীয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিচালিত। তিনি আরও বলেন,এক প্রতিবেশীকে খুশি রাখতে গিয়ে অন্য প্রতিবেশী থেকে দূরে সরে যাওয়া কোনো স্বাধীন দেশের নীতির অংশ হতে পারে না।
পাকিস্তানের সফররত পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি এসব বিষয়ের বাস্তবায়নে পারস্পরিক স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার সম্মতি দেন।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের পথে সবচেয়ে বড় আবেগঘন ও সংবেদনশীল বাধা হিসেবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও নৃশংসতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। এ বিষয়ে আজাদ মজুমদার বলেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া হয়নি। যদিও দেশটির সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং বুদ্ধিজীবীদের অনেকে মনে করেন—ক্ষমা চাওয়া সদিচ্ছা ও উদারতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হতো। কিন্তু পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সামরিক আমলাতন্ত্র বরাবরই এই চেষ্টার বিরোধিতা করেছে।
তার মতে, এই ঐতিহাসিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নিজেদের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেবে এবং যে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হবে নিজেদের অবস্থান থেকে, জাতিগত আত্মমর্যাদা বজায় রেখেই।