ছবি : সংগৃহিত
প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী, সুরকার, সংগ্রাহক, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই। আজ শনিবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে বনানীর ইয়র্ক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
বেতার ও বিটিভিতে‘আমার ঠিকানা’ ও ‘ভরা নদীর বাঁকে’ শিরোনামে দুটি সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। একসময় পত্রিকায় নিয়মিত কলামও লিখতেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং জাতীয় সংগীত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের কোচবিহারে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর পৈত্রিক বাড়ি। ভারতের কোচবিহারে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর পৈত্রিক বাড়ি। সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কাজের জন্য ২০১৩ সালে নজরুল মেলায় তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। কবি, লেখক ও গবেষক মুস্তফা জামান আব্বাসীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০। ভাওয়াইয়া গানের ওপর তার দুটি বই ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি’ এবং ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি-২’ এ ১২০০ গানের কথা বলা আছে। বাবা আব্বাস উদ্দিন এবং কাজী নজরুল ইসলামের ছবি ও পেইন্টিং নিয়ে মুস্তাফা জামান আব্বাসী প্রকাশ করেন ‘নজরুল-আব্বাসউদ্দিন স্মৃতিময় অ্যালবাম’, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বই হিসেবে বিবেচিত। একুশে পদক, নজরুল একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও বহু পুরস্কার আর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সেগুলোর মধ্যে আছে লালন পুরস্কার, আব্বাসউদ্দিন গোল্ড মেডেল, এ্যাপেক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক পুরস্কার, সিলেট মিউজিক পুরস্কার, মানিক মিয়া পুরস্কার, নাট্যসভা উপস্থাপক পুরস্কার, বাংলা সন চৌদ্দশতবার্ষিকী পুরস্কার। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর স্ত্রী আসমা আব্বাসী ছিলেন একজন শিক্ষক ও লেখক। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজি তিনি। ২০২৪ সালের ৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে বড় মেয়ে সংগীত শিল্পী সামিরা আব্বাসী বাবার সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করেছেন ফেইসবুকে। আবেগমাখা ভাষায় লিখেছেন, “আমার সোনার চান পাখী .. আর দেখা হবে না ?”
শনিবার জোহরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা হবে বলে পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে। মুস্তাফা জামান আব্বাসী ভাওয়াইয়া সম্রাট কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদের ছোট ছেলে। তার চাচা আব্দুল করিম ছিলেন পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি গানের শিল্পী। তার বোন ফেরদৌসী রহমানও একজন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। মোস্তফা কামালের মেয়ে নাশিদ কামাল একজন নজরুল সংগীত শিল্পী।
ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর মুস্তাফা জামান আব্বাসীর জন্ম। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। পড়াশোনা করেছেন বলরামপুর হাই স্কুল, কোচবিহারের জেনকিনস্ স্কুল, পার্ক সার্কাসের মডার্ন স্কুলে। পরে ঢাকায় এসে সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল আর ঢাকা কলেজের পাট চুকিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন ইতিহাসে। আব্বাসউদ্দিন আহমদ চেয়েছিলেন, তার সুদর্শন ছেলেটি সিনেমার নায়ক হোক। কিন্তু বাবার মত সুরের সাম্পানই ভাসিয়েছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মুহম্মদ হোসেন খসরু এবং ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁর কাছে নিয়েছেন সংগীতের তালিম।
ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদী, চটকা, মারফতী, বাউল, হাসনগীতিসহ গ্রামবাংলার নানা ঢঙের লোকগীতি শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কণ্ঠে। জীবনভর গানের সঙ্গে কাটানো মুস্তাফা জামান আব্বাসী গবেষক হিসেবেও দেশীয় সংগীতের বৈচিত্র্যের সন্ধান করে গেছেন। ইসলামি ও লোকধারার গান সংগ্রহ এবং তা জনপ্রিয় করতে কাজ করেছেন। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ‘কাজী নজরুল ইসলাম এবং আব্বাসউদ্দীন আহমদ গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্রের’ গবেষক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগীত সম্মিলনে উপস্থাপন করে গেছেন এ দেশের সংগীত বৈভব। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিতে ‘আমার ঠিকানা’ ও ‘ভরা নদীর বাঁকে’ শিরোনামে দুটি সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। একসময় পত্রিকায় নিয়মিত কলামও লিখতেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh