জাতীয়
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক
আলী রীয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশে যে নতুন রাজনৈতিক
পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের সংগ্রামের
ফল। তিনি বলেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দেশের মানুষের দীর্ঘকালীন ক্ষোভ ও প্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ।
জনগণ চায় এমন একটি রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা,
যেখানে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না ঘটে এবং
সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করতে পারে।”
আজ
(১৫ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদের সঙ্গে
এক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক
রীয়াজ বলেন, “আমাদের দায়িত্ব এখন ভবিষ্যতের জন্য একটি রাজনৈতিক পথরেখা তৈরি করা। তবে এই কাজ কেবল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নয়; কমিশন কেবল সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। দেশের মানুষ যে পরিবর্তন চায়,
রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো। যাতে করে তারা নিজ নিজ আদর্শে থেকে একটি বাস্তবসম্মত ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের
জন্য কাজ করতে পারে।”
তিনি
আরও জানান, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগ হলো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করা এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট পরিবর্তনের স্পষ্ট রূপায়ন ঘটানো। এর অংশ হিসেবে
আমরা ইতোমধ্যে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছি।”
রাজনৈতিক
দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য ও কিছু বিষয়ে
মতপার্থক্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি স্বাভাবিক। প্রত্যেকটি দল রাষ্ট্র গঠন
ও পুনর্গঠন নিয়ে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনা তুলে
ধরবে। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট—রাষ্ট্র পুনর্গঠন কেবল কোনো একক দল, ব্যক্তি বা সংগঠনের দায়িত্ব
নয়, এটি পুরো জাতির দায়িত্ব। রাজনৈতিক দলগুলো এই নেতৃত্বে রয়েছে,
তবে নাগরিক সমাজও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।”
তিনি
আরও বলেন, “আমরা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে অবস্থান করছি। সময় কম, কাজের গতি বাড়াতে হবে। আমাদের প্রয়োজন একটি জাতীয় সনদ, যার মাধ্যমে সকল দল ঐক্যের ভিত্তিতে
অগ্রসর হতে পারবে।”
"এই
ঐক্যের মাধ্যমেই ফ্যাসিবাদী শাসনের শীর্ষ নেতৃত্ব ও তাদের অনুসারীদের
দেশত্যাগে বাধ্য করা গেছে,”— বলেন অধ্যাপক রীয়াজ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থানে থেকেই জনগণের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং প্রয়োজনীয় ছাড় দিয়ে জাতীয় স্বার্থে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাবে।
সংলাপটি
সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম
মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং ড.
মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।