তিন দফা দাবিতে যমুনা অভিমুখে শান্তিপূর্ণ লংমার্চে পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি। বুধবার (১৪ মে) দুপুরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাংলা ট্রিবিউনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক সুবর্ণ আসসাইফ। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ভোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আন্দোলনের পেছনের মানবিক সংকট, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এবং পুলিশের হামলার বর্ণনা দেন সুবর্ণ।
তিনি লিখেছেন, “হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের মানবিক সংকটের কথা বলতে চেয়েছে—তবুও সেটা কারো চোখে পড়েনি। চোখে পড়েনি তাদের সম্ভাবনা বিসর্জনের দৃশ্য, চোখে পড়েনি লাল ফিতার জটিলতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহায়ত্ব। চোখে পড়েছে শুধু বোতল কাণ্ড। এটা মহা অন্যায়।” সুবর্ণ আরও উল্লেখ করেন, “পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডে এক শিক্ষার্থীর পায়ে জখম হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে, টিয়ার শেল ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরে মারা হয়েছে। শিক্ষকরা, সাংবাদিকরাও হামলার শিকার হয়েছেন। অথচ এই বর্বরতার বদলে আলোচনায় উঠে এসেছে একটি বোতল ছোড়ার ঘটনা।” তার মতে, প্রশাসনের অবস্থান ও উপদেষ্টার ভাষ্য এই হামলাকে আড়াল করার অপচেষ্টা। “লাঠি আর টিয়ার গ্যাস খেয়ে পেট ভরানো ছেলে-মেয়েগুলোর দিকে তাকানোর সময় হয়নি প্রশাসনের। উপদেষ্টা সেখানে দাঁড়িয়ে ‘হয়তো উসকানি’ দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করলেন,” — বলেন সুবর্ণ।
তিনি জানান, পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী। ছোট-বড় জখম নিয়ে আহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। সাংবাদিক আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে বসিয়ে রাখা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। নিজের ওপর হামলার বর্ণনায় সুবর্ণ লেখেন, “আমার শিক্ষক নঈম স্যারকে ঘিরে কয়েকজন পুলিশ অশোভন আচরণ করছিলেন। আমি সামনে গিয়ে স্যারকে জড়িয়ে ধরি, যাতে তার সম্মানহানি না হয়। তখনো আমার গলায় প্রেসকার্ড ঝুলছিলো। এরপরই পিছন থেকে আমার ঘাড়ে লাঠি দিয়ে দুইবার আঘাত করা হয়। আমি প্রশ্ন করি, ‘প্রেসকার্ড দেখেও কেনো মেরেছেন?’ জবাবে তারা কিছুই বলেনি, চোখে ছিল শূন্যতা।”
এছাড়া তিনি বলেন, “জবি শিক্ষার্থীদের এই লংমার্চ ছিল আমলাতন্ত্র ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। অথচ আমাদের উপদেষ্টা দেখালেন, কীভাবে একটি বোতলের আড়ালে পুরো আন্দোলনের মানবিক বাস্তবতা ঢেকে দেওয়া যায়।” ঘটনার পরও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো কার্যকর বিবৃতি বা সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। আহত শিক্ষক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের সেবায় এখনো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।