আন্দোলনরত লাখো ছাত্র-জনতার চাপের মুখে পদত্যাগ করতে শেখ হাসিনাকে পা ধরে অনুরোধ করেছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা—এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
রোববার (২৫ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চানখারপুল গণহত্যার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি বিচারকদের সামনে লিখিতভাবে এ তথ্য পড়েন।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, ৫ আগস্ট সকালে গণভবনের দিকে অগ্রসর হওয়া গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা ছাড়তে অনড় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাপে রাখেন বলপ্রয়োগ চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য।
তাজুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনা বুঝতে চাইছিলেন না যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ সময় পরিবারের সদস্যরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে শেখ রেহানা তার বোনের পা ধরে অনুরোধ করেন পদত্যাগ করার জন্য।”
প্রসিকিউটর আরও জানান, ৫ আগস্ট গণভবনে ডাকা হয় সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে। শেখ হাসিনা তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন কেন আন্দোলনকারীদের দমন করা যাচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “তাদের বিশ্বাস করে পদে বসানো হয়েছে, অথচ তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ।”
আইজিপি এ সময় জানান, পরিস্থিতি পুলিশেরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং আর বেশি সময় তারা কঠোর অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন না।
চূড়ান্ত পর্যায়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বোঝানোর পর শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি তখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন। পরে শেখ হাসিনা পদত্যাগে সম্মত হন। তবে তিনি একটি ভাষণ রেকর্ড করে জাতির উদ্দেশে প্রচার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী শাহবাগ ও উত্তরা থেকে লাখো মানুষ গণভবনের দিকে এগিয়ে আসছে, এবং ভাষণ রেকর্ড করতে গেলে গণভবন থেকে নিরাপদে বের হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে—এ বিবেচনায় তাকে ৪৫ মিনিটের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
এরপর শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন তেজগাঁও বিমানবন্দরের একটি হেলিপ্যাডে যান শেখ হাসিনা। সেখান থেকে কয়েকটি লাগেজসহ তারা বঙ্গভবনে যান। আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর, বেলা আড়াইটার দিকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।”