ছবিঃ সংগৃহীত।
২০২৪ সালের ‘বর্ষা বিপ্লব’ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার (১ জুন) ‘চিফ প্রসিকিউটর বনাম শেখ হাসিনা গং’ শীর্ষক মামলার অভিযোগ দাখিলের মধ্য দিয়ে আলোচিত এই বিচার শুরু হয়।
চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হলো ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে চলমান গণআন্দোলনের সময় সহস্রাধিক সাধারণ মানুষের হত্যার নির্দেশ দেওয়া। মামলার অভিযোগপত্র ১৩৫ পৃষ্ঠায় উপস্থাপন করা হলেও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার তথ্যপ্রমাণ, যার মধ্যে রয়েছে ভিডিও, অডিও, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক উপাত্ত।
মামলার আরও দুই অভিযুক্ত হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তদন্ত সংস্থার মতে, এই তিনজনের বিরুদ্ধে গণহত্যা, নির্বিচার হত্যা, উসকানি এবং সহিংসতায় প্ররোচনার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
প্রসিকিউশন পক্ষ জানিয়েছে, মামলায় ৮১ জন সাক্ষী উপস্থাপন করা হবে, যাদের মধ্যে রয়েছেন—আন্দোলনের সময় আহত বা নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন, চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক সদস্য এবং তদন্ত কর্মকর্তারা। উপস্থাপনযোগ্য তথ্যপ্রমাণ হিসেবে রয়েছে সিসিটিভি ও ড্রোন ফুটেজ, অডিও কল রেকর্ডিং, ফরেনসিক রিপোর্ট, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যচিত্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “এই বিচার কোনো প্রতিশোধ নয়, বরং এটি একটি জাতির ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের শপথ। গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের পথে ফিরে যাওয়ার জন্য এটি এক ঐতিহাসিক অধ্যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শ্রদ্ধা জানাই সেই সব ভিকটিমদের, যারা আর কখনও পরিবারের কাছে ফিরবেন না, তাদের যারা চোখ, হাত, পা কিংবা শরীরের অঙ্গ হারিয়েছেন, এবং সেই সকল নির্ভীক নাগরিকদের, যাদের আত্মত্যাগ একটি নতুন ভোরের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক ছাত্র-যুব আন্দোলন। কোটা সংস্কার, বৈষম্য এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন ‘বর্ষা বিপ্লব’ নামে পরিচিতি পায়। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলন দমন করতে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভয়াবহ অপব্যবহার করা হয়, যার ফলে শত শত মানুষ নিহত ও নিখোঁজ হন, সহিংসতার শিকার হন হাজারো নাগরিক।
এ ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয় এবং একাধিক মানবাধিকার সংস্থা তা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যা দেয়। বর্তমানে মামলাটি বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে এত বড় পরিসরের অভিযোগপত্র এর আগে কখনও দাখিল হয়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh