ছবিঃ সংগৃহীত।
চলমান গুম সংক্রান্ত তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে তাদের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে কমিশন। বুধবার (৪ জুন) সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং সদস্যরা—নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন ও নাবিলা ইদ্রিস। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াও উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন গ্রহণের পর প্রফেসর ইউনূস বলেন, এই প্রতিবেদন শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক মহলেরও আগ্রহের বিষয়। তিনি নির্দেশনা দেন যেন প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইট এবং বই আকারে প্রকাশ করা হয়, যাতে মানুষ এর তথ্য সহজে জানতে পারে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “কি ভয়ংকর একেকটা ঘটনা! সমাজের ভদ্রলোকরাই এসব অপরাধ ঘটিয়েছে। তিন ফুট বাই তিন ফুট একটি খুপড়ির মধ্যে মানুষকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আটকে রাখা হয়েছে— এ যেন এক ভয়াবহ নির্মমতা। এসব ঘটনা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হলে একটি হরর মিউজিয়াম হওয়া উচিত।”
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় কমিশনের সদস্যরা জানান, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে এক হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে এবং এর মধ্যে এক হাজার ৩৫০টির যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অভিযোগের সংখ্যা তিন হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এইসব অভিযোগের মধ্যে ৩০০-এর বেশি নিখোঁজ ব্যক্তি এখনো ফিরে আসেননি। সদস্যরা অনুরোধ করেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যেন অন্তত ব্যাংক লেনদেনের মতো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পায়, তার জন্য সরকার যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।
একজন সদস্য প্রধান উপদেষ্টাকে আরও জানান, গুমের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা পরে অনুশোচনা করেছেন এবং আত্মশুদ্ধির অংশ হিসেবে লিখিতভাবে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের এমন দুটি চিঠি গণভবনেও পাওয়া গেছে, যেগুলোর বিষয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা কমিশনকে দ্রুত করণীয় চিহ্নিত করার আহ্বান জানান এবং বলেন, কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কী পদক্ষেপ প্রয়োজন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে, যাতে সরকার অল্প সময়ের মধ্যেই কার্যক্রম শুরু করতে পারে। পাশাপাশি তিনি একটি আইনি সংশোধনের কথাও উত্থাপন করেন—বর্তমানে সাত বছর নিখোঁজ থাকলে যেভাবে কাউকে মৃত ঘোষণা করা যায়, সেই মেয়াদ কমিয়ে পাঁচ বছর করার সুপারিশ করেন তিনি।
কমিশনের সাহসিকতা ও নিষ্ঠার প্রশংসা করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “আপনারা যে ভয়-ভীতি আর হুমকি উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন, তা এই দেশের মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণা। ভবিষ্যতে যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করবে, তারাও আপনাদের পথ অনুসরণ করবে।”
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh