এর আগে সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। এ সফরে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।

সফরকালীন সময় ড. ইউনূস একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। ১১ জুন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে। ১২ জুন বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। একই দিনে বিকেলে সেন্ট জেমস প্রাসাদে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজা চার্লসের হাত থেকে ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

এছাড়া ড. ইউনূস যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজ আয়োজিত এক সংলাপেও অংশ নেবেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই সফরে ড. ইউনূস ও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় আসবে। এর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা সংকট, রাজনৈতিক সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। যুক্তরাজ্য সরকারের রাজনৈতিক সমর্থন পাওয়ার দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেবে ঢাকা।

বিশেষ করে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে, যার অনেক তথ্য সরকারের হাতে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অর্থ ফেরত আনতে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চাইবেন ড. ইউনূস।

অন্যদিকে, ব্রিটেনের পক্ষ থেকেও কিছু বিষয় আলোচনায় আনা হতে পারে। বিশেষ করে, বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশকে চারটি উড়োজাহাজ কেনার একটি প্রস্তাব দিয়েছিল ব্রিটেন। বর্তমানে সেই আলোচনা স্থগিত থাকলেও, এবার সেটি পুনরায় সক্রিয় করার তাগিদ দিতে পারে লন্ডন।

প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় নির্মাতা সংস্থা এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বিগত সরকার। এর মধ্যে চারটি উড়োজাহাজ ছিল ব্রিটিশ অংশীদারিত্বে। তবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে ওই আলোচনা থমকে গেছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় গত বছরের ৮ আগস্ট, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ড. ইউনূসের একাধিক আন্তর্জাতিক সফরের একটি অংশ। এর আগে তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে, আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে, মিশরে ডি-৮ সম্মেলনে, দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে, চীনে দ্বিপক্ষীয় সফরে এবং থাইল্যান্ড, কাতার ও ভ্যাটিকানে সফর করেছেন। সবশেষ তিনি গত মে মাসের শেষদিকে জাপান সফর সম্পন্ন করেন।