ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাভজনক বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করায় দেশি ও নাইজেরিয়ানসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গত রবিবার রাতে ও সোমবার দিনে বসুন্ধরা ও মীরপুরের পল্লবী এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে ২ জন নাইজেরিয়ান নাগরিক ও একজন বাংলাদেশী নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১।
গ্রেপ্তার নাইজেরিয়ান নাগরিকরা হলেন- ফ্রাঙ্ক কোকো ও ইমানুয়েল। এছাড়া গ্রেপ্তার বাংলাদেশী নারীর নাম- মোসা. সুইটি আক্তার।
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যাবহৃত ২টি ল্যাপটপ, ৪টি আইফোন, ৩টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ৩টি বাটন মোবাইল ফোন, ১টি ট্যাব, ১টি ওরিকো ব্র্যান্ডের হার্ড ড্রাইভ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার সাথে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে বলে জানিয়েছে র্যাব।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জাহিদুল করিম।
তিনি বলেন, "সম্প্রতিকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিদেশী নম্বর ব্যাবহার করে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষুদ্র থেকে মধ্যম মানের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটি চক্র বিভিন্ন দফায় অর্থ আত্মসাৎ করছে। একই সঙ্গে ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে চক্রটি সুকৌশলে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে।
"বিশ্বাস অর্জন করলেই হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। এধরণের প্রতারণা বর্তমানে ব্যাপক হারে বেড়েছে এবং চক্রটি তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে যথেষ্ট দক্ষ। প্রতারণার ক্ষেত্রে তারা বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ অথবা টেলিগ্রাম ব্যবহার করে অথবা ভুয়া অনলাইন ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করে তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া নম্বর সংযুক্ত করে।"
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, "ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন বিদেশী সোশ্যাল মিডিয়া নম্বর অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে চক্রটিতে কিছু নাইজেরিয়ান নাগরিক জড়িত যারা বাংলাদেশী মেয়েদের মিডিয়া হিসেবে ব্যাবহার করে আড়ালে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট নম্বরে সরাসরি ক্যাশ ইন/ক্যাশ আউট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে এবং মিডিয়ায় নিয়োজিত নারীদের মাধ্যমে বিশ্বাস অর্জন করার সঙ্গে সঙ্গেই হাতিয়ে নেয় লক্ষাধিক টাকা।"
যেভাবে বিশ্বাস অর্জন
র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, বিশ্বাস অর্জনের ক্ষেত্রে তারা মূলত একজন বিত্তবান বিদেশী নাগরিকের বেশ ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ, বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে ডলারের প্যাকেজ পাঠানো অথবা কাস্টম ক্লিয়ারেন্সে বিদেশ থেকে পাঠানো দামী পণ্য নিষ্পত্তি করার জন্য নির্ধারিত চার্জ দাবি করে প্রতারণা করে।
"এক্ষেত্রে তারা ফটোশপ করা বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র ও সার্টিফিকেট বানিয়ে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে প্রথম ধাপে সামান্য অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স অথবা বিভিন্ন ডকুমেন্টেশনের জন্য বড় অংকের টাকা দাবি করা হয় যা অধিকাংশ গ্রাহক প্রলুব্ধ হয়ে টাকা দেয়।"
আগেও প্রতারণা করে গ্রেপ্তার
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার নাইজেরিয়ান নাগরিক কোকো ও ইমানুয়েল প্রায় ২ বছর এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের সহযোগী সুইটি আক্তার ৩ মাস যাবত তদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কোকো ২ বছর আগে র্যাব-১০ এর হাতে গ্রেপ্তার হয়। চলমান অভিযানে তাদের থেকে ২টি নগদ ও বিকাশ একাউন্ট এ প্রায় ১৮ লাখ টাকার স্টেটমেন্ট পাওয়া যায়, যেখানে এখনো বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঠানো মেসেজের বরাতে টাকা জমা হচ্ছে।
র্যাব আরও জানায়, তারা এর পাশাপাশি আরো মোবাইল ব্যাংকিং সিম এবং একাউন্ট ব্যাবহার করে যা উদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলমান। গ্রেপ্তার নারী সদস্য মূলত বাংলাদেশের লোকাল কোর্ডিনেটর/মিডিয়ার বেশ ধরে বিভন্ন বাংলাদেশীদের নম্বরে যোগাযোগ করে এবং তাদের প্রলুব্ধ করে অর্থ আত্মসাৎ করে। এক্ষেত্রে তার পাশাপাশি অন্যান্য কিছু বাঙালিরাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। মিডিয়া হিসেবে অংশগ্রহণকারিরা প্রতারণায় প্রাপ্ত ১০-১৫ শতাংশ টাকার শেয়ার পায়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক জাহিদুল করিম বলেন, গ্রেপ্তার বিদেশি দুই নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ দীর্ঘদিন আগেই শেষ হয়েছে বলে তারা জানায় এবং ১ জনের পাসপোর্ট আগেই জব্দ করা হয়েছে।
বিদেশী নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ না থাকলে বাড়ি ভাড়া বা সাবলেট না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
বিদেশি নাগরিকদের ভিসা না থাকা ও পাসপোর্ট জব্দ থাকার পরেও কেন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে র্যাব-১ এর এই কর্মকর্তা বলেন, "আগের মামলা গুলোর নথিপত্র দেখে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবো।"
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাসপোর্ট এবং ভিসার মেয়াদ সঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিতে হবে।"
কত জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এ বিষয়ে তিনি বলেন "এখন পর্যন্ত শতাধিক নাগরিকের কাছ থেকে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। কেউ ৫০ হাজার দিয়েছে কেউ এক লাখ দিয়েছে।"
চক্রটির সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তাইলে তিনি বলেন, "দেশি-বিদেশি আরো কিছু ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh