× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

থমথমে গোপালগঞ্জ, চলছে কারফিউ

ডেস্ক রিপোর্ট।

১৭ জুলাই ২০২৫, ১১:৫২ এএম

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলা, পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, কয়েকজনের প্রাণহানি, এত সব ঘটনার জেরে কারফিউ জারি—সব মিলিয়ে শেখ মুজিবের জন্মস্থান গোপালগঞ্জ এখন থমথমে।

বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে কারফিউ ঘোষণার বিষয়টি জানানো হয়। রাত ৮টা থেকে শুরু হয়েছে সেই ২২ ঘণ্টার কারফিউ। চলবে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৬টা পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারফিউ ঘোষণার জেরে সন্ধ্যার পরই অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে গোপালগঞ্জ শহর। ঘরে ফেরা কয়েকজন মানুষকে বিচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় দেখা গেলেও তাদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোপালগঞ্জ শহরজুড়ে টহল দিচ্ছে র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতির কথাও জানা গেছে।

পুলিশ বলছে, গোপালগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে বাড়তি নজরদারিও করা হচ্ছে।

কারফিউ নিয়ে জুলাই বিপ্লবী ও সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। জীবন-মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি না হলে সাধারণ জনগণ কেউ ঘর থেকে বের হবেন না।’

এদিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোরভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আজ গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে অমার্জনীয়। বিপ্লবী আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাওয়া তরুণ নাগরিকদের বাধা দেওয়া তাদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন এবং অত্যন্ত লজ্জাজনক। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে, তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং অনেককে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে।

আরও বলা হয়, এই নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড—যা নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে— কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোরভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের প্রতি এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই।

সরকার জানায়, আমরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের জন্য প্রশংসা জানাই এবং যেসব ছাত্রছাত্রী ও জনগণ এই হুমকি উপেক্ষা করে সমাবেশ চালিয়ে গেছেন, তাদের সাহস ও দৃঢ়তার জন্য অভিনন্দন জানাই। এই নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বিচারের মুখোমুখি হবেন। এটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে: আমাদের দেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।

অন্যদিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোপালগঞ্জ শহরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করেছে সরকার। এছাড়া দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিপুল সংখ্যক সদস্য।

বুধবার গোপালগঞ্জে ছিল এনসিপির পথসভা। এদিন দুপুর ২টার পর পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে সভা শুরু হয়। সভা শুরুর আগে বেলা দেড়টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় আয়োজিত সমাবেশের মঞ্চে এক দফা হামলা চালায় সেখানকার আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ।

এই হামলার পরও সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির নেতা। এরপর সমাবেশ শেষ হলে ফের তাদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ভাঙচুর করা হয় নতুন এ দলটির গাড়িবহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এগিয়ে গেলে তাদের উপরও হামলা হয়।

এদিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে হঠাৎ করে মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চে চড়াও হয়। এসময় সাউন্ড বক্স, মাইক ও চেয়ার ভাঙচুর করার পাশাপাশি এনসিপির উপস্থিত নেতাকর্মীদেরও মারধর করে তারা। পরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন এনসিপির নেতারা।

এনসিপির সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের এই হামলার প্রতিবাদে বিকেলে ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে সারাদেশে ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যদিও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের আহ্বানে পরে তা স্থগিত করা হয়।

অন্যদিকে হামলার ঘটনার পর কড়া হুঁশিয়ারি দেন জুলাই বিপ্লবী ও এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে ফেসবুকে তিনি লেখেন, তারা যদি গোপালগঞ্জ থেকে বেঁচে ফেরেন, তবে মুজিববাদের কবর রচনা করে ছাড়বেন।

এদিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। উভয় নেতা এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান।

এছাড়া এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আলাদা বিবৃতি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছে দলটি।

পাশাপাশি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ইসলামী আন্দোলন বাংলোদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এবং এবি পার্টির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও এই হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার দাবি করেছেন।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.