আজ ২২শে শ্রাবণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৮তম প্রায়ণবার্ষিকী। ১৯৪১ সালের এই দিনে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরলোকে যাত্রা করেছিলেন তিনি। তার অসামান্য সৃষ্টি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক এবং হাজারো গান-বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করে তুলেছে। তিনি শুধু একজন কবিই নন, ছিলেন একাধারে সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক ও মানবতাবাদী চিন্তক।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা সুন্দরী দেবী দম্পতির ১৫ সন্তানের মধ্যে ১৪তম ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কলকাতার বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের জোড়াসাঁকোর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে তিনি নদীয়া, পাবনা, রাজশাহী ও ওড়িশার জমিদারি তদারকির দায়িত্ব নেন এবং কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে দীর্ঘ সময় কাটান। ১৯০১ সালে তিনি সপরিবারে চলে যান বীরভূমের বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে, যেখানে গড়ে তোলেন এক অনন্য শিক্ষানিকেতন।
তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও বহু গদ্য সংকলন। সাহিত্যের এই অমর পুরুষ, যিনি বাংলা ভাষাকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের উচ্চতায়, আজ তার জন্মদিনে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করছেন অগণিত ভক্ত ও অনুরাগী।
১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন, যা বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দেয় বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে। শুধু সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও তার গান ছিল সাহস আর প্রেরণার উৎস। তার রচিত গানই আজ আমাদের জাতীয় সংগীত। এমন বহুমাত্রিক অবদানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির হৃদয়ে চিরন্তন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার স্থান করে নিয়েছেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত হয়েছে নানা শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান। আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে হবে ছায়ানটের আয়োজিত স্মরণানুষ্ঠান। গানে, কবিতায় আর আলোচনায় সেখানে তুলে ধরা হবে কবিগুরুর চিন্তা, দর্শন ও সৃষ্টির প্রাসঙ্গিকতা।
এ ছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে শুরু হবে এ অনুষ্ঠান। উপস্থিত থাকবেন রবীন্দ্র-গবেষক, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিজন।